ভোজ্য পত্র কি ? আসল ও নকল ভোজ্য পত্র চিনবেন কিভাবে ?

Original Bhojpatra

যন্ত্র, মন্ত্র ও তন্ত্রের কথা আলোচনা করতে গেলে অবধারিত ভাবে প্রথমেই ভোজ্য পত্রের কথা এসে যাবে। আগের দিনের ঋষি মুনিরা যত রকম পাতায় লেখা লেখি করতেন, তার মধ্যে ভোজ পত্র হলো অন্যতম ও শ্রেষ্ঠ উপাদান। আপনি যদি তন্ত্রোক্ত বিষয়ে আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আপনার ভোজ পত্র সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা জরুরী। এবং সেই সঙ্গে ভোজ্য পত্রের আসল আর নকলের পার্থক্য বুঝতে হবে। 


ভোজ্য পত্র আসলে কি?  ভোজ্য পত্র আসলে গাছের একটি পাতলা বাকল বা ছাল! সংস্কৃত শব্দে ভূর্জ, ইংরেজি তে বলা হয় হিমালয়ান বার্চ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Betula Utilis ( বেটুলা ইউটিলিস)। 



এইটি পশ্চিম হিমালয়ের পাদদেশে জন্মানো একধরনের বার্চ প্রজাতির গাছ। যার জন্ম ও বেড়ে ওঠা হিমালয়ের পাদদেশে, সমুদ্র পীষ্ঠ থেকে প্রায় 4,500 মিটার (14,800 ফুট) উচ্চতায়।  বহু শাখায় বিস্তৃত এই গাছ। এই গাছের উচ্চতা প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। উত্তরা খন্ডের গঙ্গোত্রী যাওয়ার পথে, গঙ্গোত্রী থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার আগে ভোজ বাসা নামে একটি স্থান আছে, যা ভোজ বৃক্ষের জন্য বিখ্যাত। এখানে ভোজ বৃক্ষের বিশাল বনাঞ্চল। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এখনো ভূর্জপত্র একটি দুষ্প্রাপ্য গাছ। তবে এখন দেশের বিভিন্ন সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এ গাছ রোপণ করা হচ্ছে। 



এর আদি নিবাস স্থল অস্ট্রেলিয়া, পাপুয়া নিউগিনি ও ইন্দোনেশিয়ার মতো বিভিন্ন দেশে মনে করা হলেও, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, ভারতের হিমালয়ের পাদদেশ এই বৃক্ষের অন্যতম প্রাচীন আবাস স্থল। 

Bhoj patra.tree leaves

এর পাতা পাঁচ থেকে আট সেন্টিমিটার লম্বা হয়। ডিম্বাকৃতি পাতার চারপাশ করাতের মতো ধারাল। পাতাঝরা বসন্তে অন্য অনেক গাছের মতো ভূর্জপত্র গাছের পাতা ঝরে পড়লেও তার সৌন্দর্যে ঘাটতি হয় না মোটেও। ফুলও ফোটে। ফুল হয় ক্ষুদ্র, সাদা। মে-জুন মাসে ফুল ফোটে, ফল ক্যাপসুলের মতো।  ভূর্জপত্রের মূল সৌন্দর্য কিন্তু তার বাকলে। আগেই বলেছি ভূর্জপত্রের বাকল কিন্তু লেখনীর জন্য সুপরিচিত। ভূর্জ পত্রের বাইরের অংশ সাদা বা হালকা ক্রীম রঙের, আর ভেতরের অংশ একটু বাদামি রঙের, বাকল খুব পাতলা কাগজের মতো, তবে অস্বচ্ছ,  গাছের কান্ডে যা বস্ত্রের মতো জড়ানো থাকে।




এই ছাল   অতিরিক্ত ঠাণ্ডা তে গাছের কান্ড বা ডালপালা থেকে পাতলা শাড়ির আবরনে র মতো খোলস ছাড়তে শুরু করে। 

আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে ঢাকার বলধা গার্ডেনেও বর্তমানে দুটি ভোজ পত্রের গাছ রয়েছে, যা প্রায় পাঁচ তলার সমান। 



কাগজ আবিষ্কার বা প্রচলনের বহু পূর্বে প্রাচীন কালে আমাদের দেশে এই ভোজ পত্রের ওপরে লেখা হতো। ভোজ পত্রের পান্ডুলিপি হাজার হাজার বৎসর ধরে সংরক্ষিত করে রাখা যায়, যার প্রমাণ আমাদের সনাতন ধর্মের বিভিন্ন প্রাচীন আয়ুর্বেদিয় পুঁথি পত্র ও বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থ। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো বর্তমানে এই জাতীয় ভোজ বৃক্ষের সংখ্যা খুবই নগণ্য ও সীমিত পরিসরের মধ্যে! বর্তমানে আমাদের দেশের বিভিন্ন পূরাত্বত্ত সংগ্রহশালায় ভোজ্য পত্রের ওপরে লিখিত প্রাচীন কালের হাজার হাজার পান্ডুলিপি এখনও সংরক্ষিত করে রাখা আছে। যেমন উল্লেখ করা যেতে পারে অতীতের ধংস হয়ে যাওয়া নালান্দা বিশ্ব বিদ্যালয়ের কথা । তবে আনুমানিক ১২০০ খ্রিস্টাব্দে  বখতিয়ার খিলজীর নেতৃত্বে তার মুসলমান মামলুক বাহিনী সম্পূর্ণ নালন্দা লুণ্ঠন ও ধ্বংস করে। তাতে সংরক্ষিত সমস্ত বহু মুল্যবান পুঁথি পুস্তক সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া

                              মহর্ষি সুশ্রত

বর্তমানে হরিদ্বারের গুরুকুল কাংগ্রী বিশ্ব বিদ্যালয় হলো ভারতীয় পূরাত্বত্তের অন্যতম সংগ্রহশালা। সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্র গুপ্ত  বিক্রমাদিত্যের সভা কবি কালিদাস তার রচিত কাব্যের বহু যায়গায় ভোজ পত্রের উল্লেখ করেছেন। তার রচিত কুমারসম্ভবে  বস্ত্র হিসেবে ভোজ পাতার উল্লেখ আছে। এছাড়াও বরাহ মিহিরের পঞ্চ সিদ্ধান্তিকা ও মহর্ষি সুশ্রতের রচিত সুশ্রত সংহিতা তেও ভোজ্য পত্রের বিশেষ উল্লেখ পাওয়া যায়।   এই গাছ ঔষধ তৈরীর কাজেও ব্যবহৃত হয়। যেমন এর বাকলের রস জীবাণুনাশক ঔষধ তৈরী করা হয়। গাছ থেকে তেল তৈরি করা যায়। সে তেল বাতব্যথা, দাঁতের ব্যথা, পেট ফাঁপা, হিস্টিরিয়া, কানের অসুখ ও ক্ষত সারাতে ব্যবহার করা হয়। এর ওপর জন্মানো ছত্রাক ক্যান্সার প্রতিরোধক ঔষধ তৈরীর কাজে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া এ গাছ অন্যান্য অনেক কাজেও লাগে। মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে পাওয়া বিভিন্ন পুঁথি ভোজ পত্রের ওপরে লিখিত। 

Original Bhoj patra

Duplicate Bhojpatra
       সম্পূর্ণ প্রতিবেদন পড়ার পরে এই ছবি দুটির মধ্যে
           কিছু পার্থক্য বুঝতে পারলে কমেন্টে জানান।



বর্তমানে বিভিন্ন জ্যোতিষী, তান্ত্রিকেরা নানারকম তন্ত্রোক্ত ক্রিয়ার জন্য যন্ত্রম তৈরির কাজে ভোজ্য পত্রের ব্যবহার করে থাকেন। এখানে যে বিষয়টি তে গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তাহলো বাজারে যদি কোনো জিনিসের অধিক পরিমাণে চাহিদা থাকে, আর পর্যাপ্ত পরিমাণে সাপ্লাই না থাকলে, অধিক মুনাফার আশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ীগন নকল ভোজ্য পত্র বিক্রি করতে শুরু করেন, যা সত্যি দুঃখ জনক। ভোজ্য পত্রের ক্ষেত্রেও  যা প্রযোজ্য। আসলে এতে কিন্তু জ্যোতিষ, ও তন্ত্রের বদনাম হচ্ছে। যদিও জ্যোতিষ ও তন্ত্র দুটো ভিন্ন। মনে রাখা জরুরী যে,আসল ভোজ পত্রের পরিবর্তে নকল ভোজ পত্র হলে তন্ত্র ক্রিয়া সম্পূর্ণ ব্যার্থ! জ্যোতিষ তান্ত্রিক বন্ধুদের কাছে আশা রাখছি, এবার থেকে তারা নিশ্চয়ই সঠিক ভোজ পত্র বা ভূর্জ্য পত্রের চয়ন করবেন।   

      ভিডিও টি দেখুন


বিস্তারিত ভাবে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন!

                                👇👇

                           birch tree types

           

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বারো মুখী রুদ্রাক্ষের উপকারিতা ও ব্যবহার বিধি !

স্বপ্ন দোষ ? কালসর্প দোষ ? বশীকরণ বা কর্মে সাফল্য চান? তাহলে জানুন ময়ুর পালকের কিছু অসামান্য গুনাগুন!