যন্ত্রম সাধনা রহস্য !

yantra - rishi - dhar - arts

যন্ত্র কথাটার সাথে আমরা সকলেই কমবেশি পরিচিত। আধুনিক সময়ে আমরা যন্ত্র বলতে শুধু মেশিন বুঝি। আমরা যন্ত্র বলতে এটাই বুঝি, যার দ্বারা কম সময়ে, কম পরিশ্রমে অধিক কাজ সুসম্পন্ন হয়। কিন্তু বৈদিক যুগের বিভিন্ন পুথি পুস্তিকার দ্বারা জানতে পারা যায় যে, বৈদিক যুগেও অর্থাৎ আর্য্য সভ্যতাতে যন্ত্রের প্রচলন ছিল। 

shri-yantra-puja


যন্ত্রকে সংস্কৃত উচ্চারণে যন্ত্রম বলা হয়। বিভিন্ন গবেষণা দ্বারা জানতে পারা যায়, আদতে এই যন্ত্রম কোনো মেশিন নয়। তবে এর দ্বারা ব্যক্তির কাজ অবশ্যই তরান্বিত হয়। কিন্তু কি ভাবে? এই যন্ত্রম হলো যাগ, যোগ, যজ্ঞ পূজা ক্রিয়া আদির একটি বিশেষ উপকরণ। মহর্ষি বাল্মীকি রচিত রামায়ণও দৈত্য গুরু শুক্রাচার্য্য দ্বারা নির্মিত একটি যন্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। যার দ্বারা রাক্ষস রাজ রাবনের স্বর্ণ লঙ্কা একটি বিশেষ উপায়ে সুরক্ষিত ছিল। মহাভারতের মূল নায়ক ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রাজধানী দ্বারকাও স্বয়ং সুদর্শন চক্র দ্বারা রক্ষিত ছিল। মনে রাখবেন এই সুদর্শন চক্র আদতে একটি যন্ত্রম।

 


পূরা কালে মূর্তি পূজার বিশেষ প্রচলন ছিল না। তাই তখন দেবতার স্বরূপ হিসেবে শুধু যন্ত্রমের সাধনা করা হতো। আর তখন মূর্তির বদলে এই যন্ত্রমকেই দেবতার প্রতিক বলে মনে করা হতো। মাহাত্ম্য বিশেষত অনুযায়ী দেবতারা যেমন বিভিন্ন, ঠিক যন্ত্রমও বিভিন্ন দেবতার প্রতিক অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। প্রকৃতিগত ভাবে এই যন্ত্রম নির্মাণ বাস্তু সম্মতঃ জ্যামিতিক পদ্ধতি অনুসারে তৈরি করা হয়ে থাকে। এর প্রতিটা কোণ, রেখা, বর্গ, ত্রিভুজ, বৃত্ত সহ প্রতিটা অংশ, বিশেষ বিশেষ অর্থ বহন করে। কোণ, বর্গ, ত্রিভুজ, বৃত্ত যুক্ত করে এর বিশেষ একটি আকৃতি দেওয়া হয়। সাধনার পূর্বে সঠিক পদ্ধতি অর্থাৎ সঠিক দিক নির্ণয় করে তা বসানো হয়। তারপর সাধক তার ইচ্ছা অনুসারে নিজের ইষ্ট দেবের সাধনা করতে সক্ষম হন। 



বিভিন্ন মনোষ্কামনার্থে  বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রম নির্মাণ করা হয়ে থাকে। যে ভাবে দেবী দেবতা বিভিন্ন ধরনের হয়, এবং তাদের রঙও ভিন্ন, ঠিক সেই ভাবে যন্ত্রম নির্মাণের সময় বিধি অনুসারে বিভিন্ন প্রকারের রঙের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর বিশেষ তাৎপর্য আছে, যেভাবে দেব দেবীর প্রতিমা বা মূর্তি উক্ত দেবতার প্রতিনিধিত্ব করে, যন্ত্রমও ঠিক সেই ভাবে উল্লেখিত দেবতার প্রতিনিধিত্ব করে। তন্ত্র প্রক্রিয়া দ্বারা যজ্ঞের মাধ্যমে যন্ত্রে উল্লেখিত দেবতার পূজার মাধ্যমে যন্ত্রে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়, এবং সেই যন্ত্রম কে উক্ত দেবতার স্বরূপ বলে মনে করা হয়। প্রকৃতপক্ষে যন্ত্রম তখন দেবতার আবাস স্থল হয়ে ওঠে। বিভিন্ন দেবতার যন্ত্রম যেমন বিভিন্ন, আবার সেই যন্ত্রমের মধ্যেও প্রকার ভেদ আছে। যন্ত্রম নির্মাণ সব সময় সঠিক বিধি অনুযায়ী হওয়া উচিত।

 
Yantram - puja

যদি এর মধ্যে একটু ভূল ত্রুটি থাকে তাহলে এর দ্বারা সৎ কর্মে সফলতা লাভ একপ্রকার অসম্ভব! অনেক সময়ে ক্ষতির আশঙ্কাও অমুলক নয়। এখন প্রশ্ন হলো যন্ত্রম কোন বস্তুর ওপরে নির্মাণ করলে তা সঠিক হবে?  

যন্ত্রম চার প্রকার বস্তুর ওপর নির্মাণ করা যেতে পারে। যথা স্বর্ণ পত্র, রৌপ্য পত্র, তাম্র পত্র ও ভোজ্য বা ভূর্জ পত্র। এর মধ্যে তাম্র বা তামা সহজ লভ্য ও শুদ্ধ। তবে আজকাল বাজারে যে গোল্ড প্লেটেড যন্ত্রম পাওয়া যায়, তা মূলতঃ তামা দিয়েই তৈরী। নিশ্চিত ভাবে তাই এই যন্ত্রম ব্যবহার করা যেতে পারে। 



মনে রাখবেন প্রকৃতিতে প্রতিটা কার্য্যই নির্দিষ্ট ও সুসময়ে হওয়া উচিত। তাই যন্ত্রম নির্মাণের সময়ে শুভ মূহুর্ত দেখে, তবেই যন্ত্রম নির্মাণ বা প্রতিষ্ঠা করা উচিত। 
where-to-place-shri-yantra


পূজা বিধি ঃ মনে রাখবেন সঠিক পূজা পদ্ধতি দ্বারা যন্ত্রম নির্মাণ হওয়া উচিত। আমার সাথে প্রতিনিয়ত এমন অনেক লোকের সাক্ষাৎ হয়, যাদের বিভিন্ন রকম সমস্যার কথা বলতে শোনা যায়। যেমন ব্যবসা সংক্রান্ত, ছেলে বা মেয়ের পড়াশোনায় অমনোযোগ, বিবাহে বাধা ইত্যাদি। যাদের ব্যবসা সংক্রান্ত, তারা ব্যাপার বৃদ্ধি, লক্ষ্মী গনেশ, কুবের, ধনদা, লক্ষ্মী শ্রীযন্ত্র ব্যবহার করতে পারেন।


যাদের ছেলে মেয়েরা পড়াশুনায় অমনোযোগী, তাদের কে বলবো সরস্বতী যন্ত্রম বা নীল সরস্বতী যন্ত্রম ব্যবহার করার জন্য। সঠিক পূজা পদ্ধতি দ্বারা প্রতিষ্ঠা করিয়ে পড়ার ঘরের উত্তর পূর্ব কোণের দিকে ছোট্ট তাক বা সেল্ফে রেখে সকাল সন্ধ্যায় নিয়মিত ধূপ ধূণা দিন। এই বিষয়ের ওপর আলাদা বিস্তারিত ভাবে প্রতিবেদন রয়েছে, সম্ভব হলে অবশ্যই দেখে নেবেন। যাদের বিবাহ সংক্রান্ত সমস্যা বা বাধা রয়েছে, তারা ভূবনেশ্বরী বা কাত্যায়নী যন্ত্রম ব্যবহার করতে পারেন। বিভিন্ন যন্ত্রম সম্পর্কে আরও বিস্তারিত ভাবে জানার জন্য আমাদের সঙ্গে থাকুন এবং এই পেজটি কে নিয়মিত ফলো করুন ।

সব শেষে একটাই কথা বলবো, কোনো কিছু জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন। আর যদি জ্যোতিষ, বাস্তু, ফেংশুই, যন্ত্র, তন্ত্র সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চান, তাহলে আমাদের এই পেজটি তে লাইক দিন, আর আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ( DHAR ARTS ) টি সাবস্ক্রাইব করে পাশের নোটিফিকেশন বেল আইকন টি প্রেস করে দিন......।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভোজ্য পত্র কি ? আসল ও নকল ভোজ্য পত্র চিনবেন কিভাবে ?

বারো মুখী রুদ্রাক্ষের উপকারিতা ও ব্যবহার বিধি !

স্বপ্ন দোষ ? কালসর্প দোষ ? বশীকরণ বা কর্মে সাফল্য চান? তাহলে জানুন ময়ুর পালকের কিছু অসামান্য গুনাগুন!