সঙ্কট মোচন হনুমানজীর কৃপায় থাকবে না আর অকাল মৃত্যু ভয় !




কথায় বলে জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, এই তিন বিধাতা নিয়ে। বিধির বিধানে মৃত্যুই একমাত্র সত্য। আর এই সত্য সব সময় পীড়া দায়ক হয়। এখন প্রশ্ন হলো মৃত্যু কি ? 

মৃত্যু হলো এমন এক চরম সত্য যা প্রত্যেকের জীবনেই আসবে। জন্ম নিলে মৃত্যু কে বরণ করতে হবেই। মৃত্যু সাধারণত আমাদের দুই রকমের হতে পারে। 

১ ( এক)  বার্ধক্য জনিত কারণে, যা স্বাভাবিক মৃত্যু। আর ২( দুই ) নির্দিষ্ট বার্ধক্যের আগেই আকষ্মিক মৃত্যু। এই আকষ্মিক মৃত্যুই হলো অকাল মৃত্যু! এই অকাল মৃত্যুর ফলে পরিবারের ওপর নেমে আসে চরম আঘাত, মৃতের পরিবার কে যা, আমৃত্যু কষ্ট দেয়। 

এখন আপনার মনে প্রশ্ন উঠতে পারে, অকাল মৃত্যুর সঙ্গে আপনার কি সম্পর্ক? হয়তো নেই। কিন্তু হতে কতক্ষন! আমরা কেউই এমন কিছু কখোনোই প্রত্যাশিত করি না। এটা আমাদের কাছে কখনোই কাম্য নয়। কিন্তু তা সত্বেও অপ্রত্যাশিত ভাবে কখনো কখনো এমনটা ঘটে যায়। মৃত ব্যক্তির আত্মা কষ্ট পায় কিনা বলতে পারবো না। কিন্তু সেই মৃত ব্যক্তির পূত্র বা কন্যা, যেই থাকুক না কেন, তার গর্ভধারিনী মাতা আর জন্ম দাতা পিতা যে, তার জন্য সবচেয়ে বেশী কষ্ট পায়, এবং আজীবন কেঁদে চোখের জলে ভাসাবে এতে কোনো ভুল নেই। এখন আপনার মনে প্রশ্ন উঠতে পারে, আপনি কোন সনামধন্য জ্যোতিষী নন, বা আপনার নিজের বা পরিবারের কারুর অকাল মৃত্যু যোগ আছে কি নেই, আপনি তা জানেন না। প্রথমেই বলেছি কোন মৃত্যুই বাঞ্ছিত নয়। শাস্ত্রে বলা হয়, আমাদের মৃত্যু নির্ভর করে আমাদের কর্ম্মের উপর, বা কর্ম্ম ফলের উপর। ভালো করে বললে বলবো, কর্মই আমাদের মৃত্যু কে সুনিশ্চিত করে।



যেমন আমরা এটা জানি যে, একজন সাঁপুড়ের জীবন হানির আশঙ্কা থাকে তার পোষ্য সর্প থেকেই। হয়তো সেই সাঁপুড়ে সেটা জানে। তবুও তাকে জেনে বুঝে পেটের দায়ে সেই কাজ করতে হয়।


একজন মদ্যপ ব্যক্তির জীবন হানি ঘটে মদ্য পান করে। একজন কর্কট রোগী ভাবেন, তার কর্কট রোগের কারণ হয়তো অপরিমিত ধুম্রপান। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মারন রোগ কর্কট শুধু ধুমপানের কারণেই হয় না, আরও অনেক কারণে হতে পারে। যেমন তার মধ্যে অতিরিক্ত মদ্যপান, ও যেকোনো ধরনের রেড মিট্! তা সে বিফ, মর্টন, বা পর্ক যাই হোক না কেন, তাই তো আজকাল বলিউডের গ্লামার দুনিয়ায় দেখা যায়, একের পর এক সেলেব্রিটি দুরারোগ্য মারণ ক্যান্সারে আক্রান্ত। তারা নিজেদের গ্লামার ধরে রাখার জন্য, এই রেড মিট্ কে আহার হিসাবে গ্রহণ করতেন। তাই বলবো নিজেকে সুস্থ রাখতে যতটা সম্ভব এই সব খাবার বর্জন করুন। কারণ আমাদের জীবনটা খুবই ছোট ও মূল্যবান। উদাহরণ হিসেবে বলবো, একজন নামকরা প্রখ্যাত বলিউডের অভিনেত্রী, যিনি অতীতে ধুম্রপান, মদ্যপান, সবই করেছেন, ফলস্বরূপ একসময়ে তার জরায়ু মারণ ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। কর্কট রোগ থেকে বাঁচতে কেমো যথেষ্ট না হওয়ায় জরায়ু কেটে বাদ দিতে হয়। আজ তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ, কিন্তু সন্তান ধারণে অক্ষম! আবার এমন কেউ কেউ আছেন, যারা পরবর্তী কালে মাতৃত্ব লাভ করেছেন ঠিকই, কিন্তু সন্তান হয়েছে বিকলাঙ্গ! এখন হয়তো সেই সন্তানের মা বিকলাঙ্গ সন্তান জন্মের কারণ হিসাবে নিজের অতিতের কর্ম কে দোষ দিচ্ছেন।


একজন HIV পজেটিভ ব্যক্তি হয়তো তার নিজের রোগের কারণ কাউকে না বলতে পেরে নিজের মনে মনে বিশ্লেষণ করতে থাকেন।


আপনি হয়তো ভাবছেন, আপনি উপরোক্ত এমন কিছুই করেন না, সুতরাং আপনার ভয়ের কোনো কারণ নেই। আমি বলছি, এগুলো আমার আলোচনার বিষয় নয়। উপরোক্ত বিষয় আলোচনা করলাম একটাই কারণে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সময় বিশেষ, বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা সঠিক পথ অবলম্বন করতে পারি, কিন্তু আকষ্মিক দুর্ঘটনা আমাদের সেই সময়টাও দেয় না।


 


আমরা প্রায় প্রতিদিনই সংবাদ পত্র, ডিজিটাল মিডিয়া বা টিভি চ্যানেল খুললেই এরকম একটি বা একাধিক অপ্রত্যাশিত খারাপ খবর পেয়ে থাকি। যা এখন নিত্যদিনের মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাই হোক মূল আলোচনায় ফিরে আসি। এখন আমাদের সমাজ জীবন প্রতিনিয়ত জেট গতিতে ছুটে চলেছে, পেছনে ফিরে তাকাবার অবকাশ নেই।



" আমরা দুই, আমাদের এক " এখন এই নীতি তে এই সমাজ চলছে, তাই আমাদের আরও বেশি সজাগ থাকতে হবে। নিজের জন্য না হলেও অন্তত পরিবারের জন্য বেশি করে ভাবতে হবে। মনে রাখতে হবে, আপনার জন্য বাড়িতে কেউ অপেক্ষা করছেন। সেই জন্য সর্বদা সঠিক সুরক্ষা অবলম্বন করুন।



আকষ্মিক দুর্ঘটনা থেকে মুক্তির উপায়ঃ 

আপনি নতুন গাড়ি কিনেছেন, দুই চাকা বা চার চাকার? যাই কিনে থাকুন না কেন, আপনার সাধের গাড়ির সুরক্ষা, সেই সঙ্গে আপনার নিজের সুরক্ষাও রয়েছে কিন্তু আপনার নিজের হাতে! চেষ্টা করুন যাতে আপনার গাড়িতে কোনো প্রকার আঘাত বা ডেন্ট না লাগে। অর্থাৎ বডি তুবরে না যায়। যদি তাই হয়, তবে অবিলম্বে তার রিপেয়ার করুন! এতে আপনারই মঙ্গল। নাহলে আপনার ওপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই নতুন গাড়ি কেনার পর অবশ্যই পূজা করিয়ে নেবেন, তা সে আপনার পছন্দের যে কোনো দেবতার মন্দির থেকেও করাতে পারেন। তবে বাহনের ক্ষেত্রে বিশেষত সঙ্কট মোচন বজরঙ্গ বলী মন্দির থেকে পূজা করানোই অতি শুভ। যে কোনো মঙ্গলবার শুভ মূহুর্তে সঙ্কট মোচন বজরঙ্গ বলী মন্দির থেকে নিজের নাম গোত্র দিয়ে পূজা করিয়ে নেবেন। যদি আপনি অপর ব্যক্তির ( মালিকের ) গাড়ীর, বিশেষতঃ চারচাকা বা তার বেশি চাকার গাড়ীর চালক হন তাহলেও নিজের নাম গোত্র দিয়ে পূজা করিয়ে নিন।



পূজার পরে ভবিষ্যতে কখনো আপনার যাত্রা কালে আপনি ব্যতিত অন্য কোনো চালকের হাতে গাড়ী না ছাড়াই সঠিক সিদ্ধান্ত। আপনি গাড়ীর খালাসী বা সহকারী না হলে, চালকের বাম পাশে বসা থেকে বিরত থাকুন।


মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদ ব্যাস রচিত মহাভারতে উল্লেখ আছে, কিভাবে ভগবান সঙ্কট মোচন মহাবলী হনুমান কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুন ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে সহায়তা করেন। কৌরব পক্ষের যত রথী - মহারথী, যেমন পিতমহ ভীষ্ম, গুরু দ্রোণাচার্য, কুলগুরু কৃপাচার্য্য, অশ্বত্থামা, ও কর্ণের মতো প্রভৃতি যোদ্ধারা যখন তাদের দৈব শক্তি সম্পন্ন বিদ্ধংসী অস্ত্র শ্রীকৃষ্ণ চালিত অর্জুনের রথের ওপর নিক্ষেপ করতেন, তখন সেই বিক্রাল বিদ্ধংসী অস্ত্র রুদ্রাবতার ভগবান সঙ্কট মোচন মহাবলী হনুমান মহাকাল রূপে স্বয়ং গ্রাস করতেন। এখানে একটা বিষয় খেয়াল করবেন যে, সকল জগতের ত্রাতা, জগৎ পালক, সর্বেশ্বর ভগবান স্বয়ং, অর্জুন রথের চালক হওয়া সত্ত্বেও, ভগবান চালিত অর্জুনের রথের রক্ষা কর্তা রূপে কিন্তু সর্বদা রথের চুড়ায় ও ধ্বজায় ( পতাকা ) বিরাজমান ছিলেন হনুমানজী। তাই আপনার আরাধ্য বা ইষ্টদেব যেই হোন না কেন, তাদের সাথে আপনিও আপনার গাড়ীতে ( দুই চাকা, বা তার বেশী চাকা বিশিষ্ট যেকোন যান ) একটি পাহাড় তোলা উড়ন্ত হনুমানজীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করুন। এবং আপনি আপনার সুবিধা মত জায়গায় সেটা ঝুলিয়ে দিন। 


এটি বাজারে এখন সহজ লভ্য। এছাড়া বাহন দুর্ঘটনা নাশক যন্ত্রমের ষ্টীকার ব্যবহার করুন। বাইক হলে গাড়ীর সামনে, আর চার চাকার বাহন হলে সামনে ভেতরে দুই জায়গাতেই লাগানো যেতে পারে। তবে এগুলি প্রতিষ্ঠা করার পরে আপনি আপনার বাহনকে ভগবান সঙ্কট মোচন মহাবলী হনুমানজীর মন্দির থেকে যে কোনো মঙ্গলবার শুভ মূহুর্তে নিজের নাম গোত্র দিয়ে পূজা করিয়ে নেবেন।


আর অবশ্যই আপনার পছন্দমতো কোন যায়গায় জয় শ্রী রাম লিখে রাখুন। যাতে আপনার নজরে আসে। কারণ ভগবান শ্রীরামের নাম শ্রী হনুমানের অতি প্রিয়। শ্রীরামের নামই, শ্রী হনুমানের প্রধান চালিকাশক্তি। শ্রীরামের নামেই সকল বাঁধা দুর হয়। 


মহান সন্ত গোস্বামী তুলসী দাস রচিত, হনুমান চল্লিশা তে বলা হয়েছে, 

ভূত পিশাচ নিকট নহি আবৈ। মহাবীর জব নাম সুনাবৈ।। নাসৈ রোগ হরৈ সব পীড়া। জপত নিরন্তর হনুমত বীরা। সঙ্কট তেঁ হনুমান ছুড়াবৈ। মনক্রম বচন ধ্যান জো লাবৈ। সব পর রাম তপস্বী রাজা। তিন কে কাজ সকল তুম সাজা।। ঔর মনোরথ জো কোই লাবৈ। সোই অমিত জীবন ফল পাবৈ।।


তাই যাত্রাপথে বের হওয়ার আগে আমরা অনেকেই যেমন নিজ গৃহের ঠাকুর দর্শন করে প্রতিদিন নিজের কর্মস্থলে গমন করি, ঠিক সেই ভাবে প্রতিদিন সঙ্কট মোচন ভগবান শ্রী হনুমানজী কে স্মরণ করে, জয় শ্রী রাম নাম উচ্চারণ করে আমাদের কর্মস্থলে গমন করা উচিত। এবং তাতে আমাদের নিশ্চিত সফলতা আসবেই।

                                            জয় শ্রী রাম 

                                            জয় হনুমান....... ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বারো মুখী রুদ্রাক্ষের উপকারিতা ও ব্যবহার বিধি !

ভোজ্য পত্র কি ? আসল ও নকল ভোজ্য পত্র চিনবেন কিভাবে ?

স্বপ্ন দোষ ? কালসর্প দোষ ? বশীকরণ বা কর্মে সাফল্য চান? তাহলে জানুন ময়ুর পালকের কিছু অসামান্য গুনাগুন!