দর্শকের বিপুল চাহিদায় আরও একবার ফিরে আসতে চলেছে টিভির পর্দায়, শ্রদ্ধেয় ড: রামানন্দ সাগরের কালজয়ী ও ঐতিহাসিক ধারাবাহিক রামায়ণ।
করোনা মহামারী আবার দেশে তার দ্বিতীয় পর্যায়ের ধংসাত্মক লীলা ইতিমধ্যেই দেখাতে শুরু করে দিয়েছে। এমত অবস্থায় আবার প্রবল ভাবে মানুষের মনে গত বছরের মতো লক ডাউনের প্রবল ভীতি জেগে উঠেছে।
গত বছরে লক ডাউনের সময় সরকারি চ্যানেল দুরদর্শন ( DD 1 ) এ রামানন্দ সাগরের রামায়ণের সম্প্রচার করা হয়। সে সময় বিশ্বের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দর্শকের সংখ্যা বিচারে রামায়ণ প্রথম স্থান অধিকার করে। তবে পূর্বের (১৯৮৭ সাল, যখন প্রথম রামায়ণ শুরু হয়) মতোই এসময়ে অনেক বামপন্থী লিবারেল তথাকথিত সুশীল সমাজের বুদ্ধিজীবী গন রামায়ণ দেখানো নিয়ে অযথা বিরোধ ও বিতর্ক সৃষ্টি করে। দুরদর্শন তাতে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত না করে দর্শকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। ফলে নতুন প্রজন্মের কাছে ভগবান রাম ও রামায়ণ জানার জন্য আবারও একপ্রস্থ নতুন রাস্তা খুলে গেল।
১৯৮৭ সালে যখন রামানন্দ সাগরের রামায়ণের প্রথম বার সম্প্রচার করা হয়, তখন সেসময় সম্প্রচারের প্রথম দিন থেকেই প্রতি রবিবার সকাল ৯টার সময়, সম্পূর্ণ দেশের প্রতিটা শহর ও গ্রামের প্রতিটা জনপথ শুনসান হয়ে যেত। যেন অঘোষিত কার্ফু! সেই সময়েও রামায়ণের টিআরপি ছিল হিমালয়ের সমান উচ্চতার শিখরে। আজও সেই ধারা অব্যাহত।
রামানন্দ সাগরের নির্দেশনা ও রবীন্দ্র জৈনের সুর ছিল অনবদ্য। যা এককথায় ইতিহাস সৃষ্টিকারী। যার কোনো বিকল্প হয় না। এছাড়া চরিত্র অঙ্কনের দিকেও রামানন্দ সাগরের দৃষ্টি ছিল সদা সজাগ ও সতর্ক! যেমন শ্রী রাম ছিলেন ক্ষত্রিয় যোদ্ধা, তাই রামের চরিত্রে ক্ষত্রিয় অরুন গোভিল, আর লঙ্কেশ্বর রাবন ছিলেন একাধারে ব্রাহ্মণ ও শিবের একনিষ্ঠ ভক্ত , তাই তার চরিত্রে ভগবান শ্রী রাম ও ভগবান শিবের একনিষ্ঠ ভক্ত বিদ্বান অরবিন্দ ত্রিবেদী। এছাড়াও প্রতিটা চরিত্রই সেই মতো যথাযথ। সীতার চরিত্রে দীপিকা চিকলীয়া, ও লক্ষ্মনের চরিত্রে সুনীল লাহিড়ী, সঙ্কট মোচন হনুমানজীর চরিত্রে বিশ্ব খ্যাত কুস্তিগীর দারা সিং, ও জাম্বুবান চরিত্রে রাজশেখর উপাধ্যায়।
রামায়ণ যে শুধু মনোরঞ্জনের জন্য তা কিন্তু নয়, রামায়ণ পারিবারিক শিক্ষা মূলক বিষয় বটে। রামায়ণ কখনো আমাদের ভোগী হতে শেখায় না। বরং রামায়ণ শিক্ষা দেয় ত্যাগের। রামায়ণের প্রতিটা চরিত্রই কিন্তু ত্যাগের।
বাস্তব হলো এটাই যে, এখানে কারোর কাছে কেউ হারে না, বা কেউ জেতে না। রামায়ণ থেকে আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শিক্ষা গ্রহণ করি। রামায়ণ থেকে আমরা শিখি পিতা - মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য। সন্তানের প্রতি পিতা মাতার কর্তব্য। আদর্শ স্বামী হিসেবে স্ত্রীর প্রতি দায় দায়িত্ব ও তার ভরন পোষণ ও সম্মান রক্ষা। ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের স্নেহ ও ভালবাসা। সেবক ও স্বামী, ভক্ত ও ভগবানের মধ্যে আত্মার সম্পর্ক। রাম এখানে সর্বগুণের আধার ঈশ্বর, ভগবান বা সাধারণ কোনো পুরুষ নয়। বরং সাধারণ হয়েও যেন অসাধারণ! নিজেকে উত্তম মর্যাদার পরিসীমার মধ্যে বেঁধে হয়ে উঠেছেন পুরুষোত্তম।
দেশে আবার নতুন করে দ্বিতীয় পর্যায়ের করোনা মহামারীর ঢেউ আছড়ে পড়ছে। ভোট পরবর্তী পর্যায়ে লক ডাউনের সম্ভাবনা প্রবল! এমন ভীতি মানুষের মনে কাজ করছে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা করে সকলকে আশ্বস্ত করেছে যে, সরকারের তরফ থেকে লক ডাউনের কোন সম্ভাবনা নেই। লক ডাউন হোক বা না হোক, এমন ঐতিহাসিক মহাকাব্য ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য টিভির পর্দায় পুনরায় তুলে ধরার জন্য স্টার ইন্ডিয়া কে অসংখ্য ধন্যবাদ।
কয়েক দিন পরেই রাম নবমী। তাই এমন প্রবিত্র দিন কে মাথায় রেখেই স্টার ভারত চ্যানেলে পুনরায় সম্প্রচারিত হতে চলেছে ড: রামানন্দ সাগরের কালজয়ী ঐতিহাসিক ধারাবাহিক মহাকাব্য রামায়ণ। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটার সময়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন