অর্থাভাব মেটাতে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর আগে বাড়িতে সংগ্রহ করুন কিছু জিনিস !
অর্থাভাব মেটাতে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর আগে বাড়িতে সংগ্রহ করুন কিছু জিনিস !
কে ধন-সম্পদ ও অর্থের অধিকারী হতে চায় না বলুন তো? আসলে, আমরা সকলেই তাই চাই| আমরা সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে যে অর্থ উপার্জন করি যা বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য | অর্থ রোজগার করা কঠিন কাজ, কিন্তু আপনার কষ্টার্জিত অর্থ টিকিয়ে রাখা আরও কঠিন কাজ|হিন্দুরা বিশ্বাস করেন যে যদি আপনি দেবী লক্ষ্মীকে খুশি রাখতে ও আপনার গৃহে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন তাহলে সম্পদ ও সমৃদ্ধি আপনাকে কখনো ছেড়ে চলে যাবে না| দেবী লক্ষ্মী হলেন অর্থ-সম্পদের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। যে গৃহে দেবী লক্ষ্মীর বাস সে গৃহে কখনো অর্থ-সম্পদের অভাব থাকে না| মনে রাখবেন দেবী লক্ষ্মী খুব চঞ্চলা । এক জায়গায় তার মন বসে না। তাই আরও নিষ্ঠা ও ভক্তির সন্ধানে তাঁর এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে|
হিন্দু গ্রন্থে নির্ধারিত এমন কিছু জিনিষ আছে যা দেবী লক্ষ্মীর অতি প্রিয় এবং তিনি এই সকল জিনিস দ্বারা খুব সহজেই আকৃষ্ট হন । কি সেই জিনিস? যা দেবী লক্ষ্মীকে সহজেই আকৃষ্ট করে। আজ এমনই 10 টি বিষয়ের কথা উল্লেখ করবো।
কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিন মাকে সন্তুষ্ট করতে আমরা পুজোর বিভিন্ন সামগ্রী কিনে থাকি। যা দিয়ে আমরা মায়ের পুজো করি। এর ফলে আমরা মায়ের আশির্বাদ লাভ করে থাকি। এছাড়াও আরও এমন কিছু জিনিস আছে, কোজাগরী পূর্ণিমা চলাকালীন যেগুলো বাড়িতে আনলে ভীষণ ভাবে মায়ের কৃপা লাভ করা যায়, সারা বছর মা তাঁর কৃপাদৃষ্টি আমাদের ওপর বজায় রাখবেন।
১) এই প্রসঙ্গে প্রথমেই বলবো নারিকেলের কথা।
হিন্দু ধর্মে পুজোয় নারকেলের ব্যবহার অপরিহার্য। নারকেল ছাড়া পুজো সম্পূর্ণ বলে মনে করা হয় না। প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হোক বা পুজোয় সামগ্রী রূপে— নারকেলের ব্যবহার সর্বদাই চোখে পড়ে থাকে। নারকেলকে আবার শ্রীফল বলা হয়।
শ্রীফল অর্থাৎ মা লক্ষ্মীর আশির্বাদী ফল। যে ফল শ্রী অর্থাৎ লক্ষ্মী প্রদাতা বা মা লক্ষ্মীর আশির্বাদ স্বরূপ, তাই শ্রীফল। বাড়িতে নারিকেল থাকলে মা লক্ষ্মীর কৃপা সহজেই আপনার গৃহে বর্ষিত হয়। নারকেল মাত্রই শুভ।
এখানে উল্লেখ্য একটি বিশেষ ধরনের নারকেল! যা একাক্ষী নারিকেল নামে পরিচিত : একাক্ষী নারিকেল বা একচক্ষু বিশিষ্ট নারকেলকে লক্ষ্মী প্রদানকারী মনে করা হয়। এই বিশেষ নারকেল তন্ত্রের কাজে ব্যবহার করা হয়। যাঁর কাছে এই একাক্ষী নারকেল থাকে, সেই ব্যক্তির জীবনে অর্থাভাব কখনো দেখা দেয় না।
খাঁটি একাক্ষী নারকেল পেলে, তা বিশেষ মুহূর্তে তেমন লক্ষ্মী পূজা ও দীপাবলির দিন ষড়োশোপচার পুজো করে লাল রেশমী বস্ত্রে বেঁধে নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, দোকান ও বাড়ির লকারে রেখে দিন। এর ফলে মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ খুব সহজেই লাভ করবেন।
২) লক্ষ্মী কড়ি:
একটা সময় ছিল, মুদ্রার পরিবর্তে যখন বিনিময়ের একমাত্র মাধ্যম ছিল কড়ি। ঠিক কবে থেকে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে কড়ির প্রচলন হয়েছিল তা সঠিক ভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে ঐতিহাসিক রা অনুমান করেন যে, আনুমানিক ১০ হাজার বছর আগে বিনিময়ের মাধ্যম ছিল কড়ি। আজ হয়তো বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে কড়ির প্রচলন নেই ঠিকই, কিন্তু জীবন যাত্রার অন্তিমে বৈতরণী নদী পার করতে, দিতে হয় পাঁচটা কড়ি। আসলে কড়ি একপ্রকার ঝিনুক গোত্রীয় প্রাণী! যা সমুদ্রে পাওয়া যায়| এছাড়াও হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীতে বর্ণিত রয়েছে যে দেবী লক্ষ্মীর উৎপত্তিও সমুদ্র থেকে, তাই বাড়ীতে কড়ি রাখলে দেবী লক্ষ্মী সহজেই আকৃষ্ট হন|
বাজারে অনেক ধরনের লক্ষ্মী কড়ি পাওয়া যায়। সঠিক ভাবে বাছাই করে সুন্দর ও ভাল কড়ি কিনে কোজাগরী পূর্ণিমায় স্থাপন করলে মা লক্ষ্মীর আশির্বাদে বাড়ি ধন সম্পদে ভরে উঠবে।
৩) রুপোর কয়েন:
কোজাগরী পূর্ণিমার দিন যদি লক্ষ্মী, গণেশের মূর্তিযুক্ত রুপোর কয়েন কিনে মা লক্ষ্মীর কাছে পুজো করিয়ে নিয়ে নিজের মানিব্যাগে রাখেন, তা হলে অর্থ কষ্ট মুছে যেতে বেশি সময় লাগবে না।
৪) পারদের লক্ষ্মী গণেশ মূর্তি:
এই দিন যদি পারদের লক্ষ্মী ও গণেশের মূর্তি গৃহে স্থাপন করা হয়, তা হলে আপনার গৃহ সুখ, শান্তি ও অর্থে ভরে উঠবে। রূপোর বা পিতলের মূর্তিও স্থাপন করতে পারেন। তবে পারদের মূর্তি বেশি ফলদায়ক।
৫) স্ফটিকের শ্রীযন্ত্রম:
এই দিন বাড়িতে স্ফটিকের শ্রীযন্ত্রম স্থাপন করলে বাড়ি থেকে সকল প্রকার নেগেটিভ শক্তি দুরে চলে যায় এবং পজিটিভ শক্তি বৃদ্ধি পায়। এই যন্ত্রম বাড়িতে রাখলে বাড়িতে একটা সুন্দর শান্তির পরিবেশ তৈরি হয় এবং অর্থ সম্পদ বৃদ্ধি হয়।
৬) লক্ষ্মীর পাদুকা:
লক্ষ্মীর পাদুকা কোজাগরী পূর্ণিমা বা দীপাবলির দিনে স্থাপন করা যেতে পারে। যদি আপনার সামর্থ্য থাকে তাহলে আপনি রূপার পাদুকা জোড়া প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। এর ফলে বাড়িতে সুখ সমৃদ্ধি প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পায়। আপনার সম্পদের দিকে মুখ করে পাদুকা জোড়া অর্থাৎ পদচিহ্ন রাখুন ।
৭) দক্ষিণাবর্ত শঙ্খ:
শঙ্খ আসলে বিজয়ের প্রতীক, যা ভগবান শ্রীহরি বিষ্ণুর হাতে শোভা পায় ৷ মঙ্গলেরও প্রতীক হিসাবে ধরা হয় শঙ্খকে ৷ এই টি দক্ষিণাবর্ত শঙ্খ ৷ এই শাঁখ বাজানো হয় না ৷ এই টি জল শঙ্খ। এই দক্ষিণাবর্ত শঙ্খ যুগ্ম ভাবে লক্ষ্মী–নারায়ণের প্রতিক বা কৃপাধন্য। শাস্ত্র মতে, এই শঙ্খের গুরুত্ব অসীম ৷ তবে নিয়ম মেনে তা স্থাপন করতে পারলে অবশ্যই তা ভাল ফল দেয় ৷
দক্ষিণাবর্ত শঙ্খ প্রত্যেক বাড়িতে রাখা উচিত। এতে বাড়ির সুখ, শান্তি ভরে ওঠে। এবং অনেক প্রকার বাস্তুদোষ নাশ হয়।
৮) মতি শঙ্খ :
এই শঙ্খ একটি বিশেষ ধরনের যা খুব শুভ বলে মনে করা হয়| দেখতে মুক্তার মতো উজ্জ্বল।
হিন্দু সনাতন ধর্মে পূজায় শঙ্খের গুরুত্ব অনেক বেশি। সমুদ্র মন্থনের ফলে উৎপত্তি হওয়া ১৪টি রত্নের মধ্যে একটি বিশেষ রত্ন হলো এই শঙ্খ। এটি বিশ্বাস করা হয় যে, যে গৃহে এই শঙ্খ স্থাপন করা হয়, সেই গৃহ সবসময় দেবী লক্ষ্মীর আবাসস্থল থাকে। শাঁখ বা শঙ্খ, ঘরের নেতিবাচক শক্তি এবং সকল বাধা দূর করে। পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের শঙ্খ পাওয়া যায়, প্রতিটা শঙ্খের কিন্তু নিজস্ব গুরুত্ব রয়েছে। এই মতি শঙ্খ বা মুক্তার শঙ্খ জ্যোতিষশাস্ত্রে খুব শুভ বলে বিবেচিত করা হয়।
আপনি যদি আপনার আর্থিক অবস্থা সুদৃঢ় করতে চান এবং দেবী লক্ষ্মীকে আপনার বাড়িতে স্থায়ীভাবে চিরকাল রাখতে চান, তাহলে জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে মুক্তার শঙ্খ খোল আপনার গৃহের আলমারিতে নিরাপদ স্থানে রাখুন । বা আপনার ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান বা দোকানের ক্যাশবক্সে রাখুন। বিশ্বাস করা হয় যে এমনটা করলে মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ থেকে কখনো বঞ্চিত হবেননা এবং অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে ধীরে ধীরে আপনি মুক্তি পাবেন।
৯) কুবের মূর্তি:
যক্ষ রাজ কুবের হলেন, দেবী লক্ষ্মীর ধন সম্পদের রক্ষাকর্তা! বা দেবতাদের ব্যাঙ্কার বললেও ভুল হবে না। লক্ষ্মী পূজার দিন বাড়িতে কুবের মূর্তি স্থাপন করাও খুব মঙ্গলজনক বলে মনে করা হয়।
১০) পদ্ম বীজের জপমালা:
যেহেতু দেবী লক্ষ্মী পদ্মের উপর বাস করেন, তাই তাই প্রতিটা পদ্মের বীজ হলো মা লক্ষ্মীর প্রতীক। বাড়ীতে পদ্ম বীজের জপমালা রাখলে দেবী অতি সহজেই আকৃষ্ট হন, এবং ভক্তের ওপর কৃপা বর্ষণ করেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন