চলুন ঘুরে আসি পাহার নদী সবুজে ঘেরা অপরূপ সৌন্দর্যে মায়ের থান মাইথন এর কল্যানেশ্বরী মন্দির !
চলুন ঘুরে আসি পাড়ার নদী সবুজে ঘেরা অপরূপ সৌন্দর্যে মোড়া মায়ের থান মাইথন কল্যানেশ্বরী মন্দির !
যাই হোক এবার কল্যাণেশ্বরী মন্দিরের কথায় আসি। এখানে সারা বছরই পূণ্যার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। শুধু আমাদের রাজ্যেরই নয়, পাশের রাজ্যে ঝাড়খণ্ড, বিহার,ও এমনকি উত্তর প্রদেশের থেকে আগত পূণ্যার্থীরাও এখানে এসে ভিড় করে থাকেন। কথিত আছে এখানে এলে মা নাকি কাউকে খালি হাতে ফেরান না। মায়ের কাছে এলে ভক্তের সকল মনোস্কামনা পূর্ণ হয়। বিশেষ করে এখানে সন্তান হীন মহিলাদেরই সমাগম বেশি। তাদের বিশ্বাস এখানে এলে তাদের অপূর্ণ ইচ্ছা বা সাধ মা অবশ্যই পূরণ করবেন। কয়েকশো বছরের প্রাচীন পাথরের মন্দিরের দেওয়ালে কান পাতলেই শোনা যায় নানা অলিখিত ইতিহাস। মন্দির প্রাচীন হলেও রয়েছে বিশেষ অভিনবত্ব।
এই মন্দির সম্পর্কিত যে কাহিনী শোনা যায়, তা কিন্তু খুবই মজাদার, যা আমার এই প্রতিবেদনে আপনি প্রতি মূহুর্তে অনুভব করবেন।
কথিত আছে রাজা বল্লাল সেনের কুলদেবী ছিলেন মা কল্যাণেশ্বরী। তার রাজ পুরোহিত ছিলেন দেবনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন একজন কাপালিক! শোনা যায় তিনি নাকি নর বলি দিতেন। এতে মা কল্যাণেশ্বরী অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েন। একদিন তিনি বলি দিতে উদ্যত হলে এমন সময়ে মা বালিকা রূপে তার সামনে অবতীর্ণ হয়ে নিজেকে প্রকাশ করেন। মায়ের দৃষ্টিত ছিল ক্রোধান্বিত এবং সেই সঙ্গে ছিল মমত্ব বোধ। এমন দৃশ্য দেখার পর কাপালি দেবনাথের হাত থেকে খরগ পড়ে যায়। মায়ের এমন স্বরূপ চাক্ষুষ করে নিজেকে ধন্য মনে করেন। এরপরেই তিনি বালিকা রূপিণী মাকে সঙ্গে নিয়ে বল্লাল সেনের রাজ প্রাসাদে চলে আসেন। এরপর থেকে দেবী কল্যাণেশ্বরী একজন সাধারণ বালিকার মতোই থাকতে শুরু করে বল্লাল সেনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে।
বল্লাল সেনের কন্যা লক্ষ্মীর সঙ্গে তার ভালোই ভাব জমে ওঠে। কন্যা লক্ষ্মীর বিবাহের উপযুক্তা বয়স হলে পঞ্চকোটের রাজার সঙ্গে তার বিবাহ নিশ্চিত হয়ে যায়। কিন্তু বিবাহের রাতেই রাজা বল্লাল সেনের পরিবারে নেমে আসে আরো নিকষ কালো অন্ধকার! বল্লাল সেনের সঙ্গে ইছাই ঘোষের সংঘর্ষ বাধে। যুদ্ধে যাওয়ার আগে বল্লাল সেন, ভাই লক্ষণ সেন কে কন্যা সম্প্রদানের ভার দিয়ে যান। কন্যা সম্প্রদান করার সময় লক্ষ্মী শ্বশুর বাড়িতে তার একমাত্র প্রিয় সই বালিকা রূপিণী দেবী কল্যাণেশ্বরী কে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবদার শুরু করে। ভাইজীর এমন করুন আবদারে কাকা অর্থাৎ লক্ষণ সেন রাজি হয়ে যান।
কিন্তু বল্লাল সেন যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে যখন সেই কথা জানতে পারেন, তখন অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন। বালিকা কল্যাণেশ্বরী কে ফিরিয়ে আনার জন্য বল্লাল সেন পুনরায় রাজপ্রাসাদ পরিত্যাগ করেন। কিছু সময় পরেই তিনি দুর্গাপুরের গড় জঙ্গলে পৌঁছে যান। সেখানে গিয়ে তিনি তার জামাতার লোকজনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। এমন অবস্থায় দিশাহারা হয়ে, রাস্তা ভুল করে পঞ্চকোটের রাজা তার বধু ও বালিকাকে সঙ্গে নিয়ে আসানসোলের কাছে দিগারী গ্রামে চলে আসেন। সেখানে তিনি ঐ বালিকাকে বিশ্রামের জন্য একটি যায়গায় বসতে দেন। পরে সেই স্থান থেকে ঐ বালিকা নাকি আর ওঠেনি! শান্তি প্রিয় দেবী কোলাহল আর্তনাদ একেবারেই পছন্দ করেন না। এলাকায় শিশুদের কান্না, ও ঢেঁকির আওয়াজে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তাই শাঁখা পড়ার অছিলায় জঙ্গলের পথে বেড়িয়ে পড়েন। সেই গভীর জঙ্গলের পথ দিয়ে যাওয়া এক শাঁখারী তাকে এক জোড়া শাঁখা পড়িয়ে দেন। শাঁখারী তার শাঁখার মূল্য চাইলে তিনি শাঁখারী কে বলেন তার কাছে কোনো অর্থ নেই। কাছেই স্বপ্ন পুর গ্রামে আমার বাড়ি, সেই গ্রামেই রোহিণী দেওঘরিয়া নামে আমার পিতা বাস করেন, আপনি তার কাছ থেকে আমার কথা বলে এই শাঁখার মূল্য গ্রহণ করুন। বালিকার কথা মতো শাঁখারী একদিন স্বপ্ন পুর গ্রামে পৌঁছে যায়। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, আদতে রোহিণী দেওঘরিয়ার কোনো কন্যা সন্তান নেই! এমন কথা শোনার পর আশ্চর্যান্বিত হয়ে রোহিণী দেওঘরিয়া শাঁখারীর সঙ্গে ঐ জঙ্গলে চলে আসেন। সে সময় বালিকা রূপিণী মা পেছন ফিরে বসে তার শাঁখা পড়া অবস্থায় দুই হাত তুলে দেখান। তার আর বুঝতে বাকি রইলো না, যে এ কন্যা আর পাঁচটা কন্যার মতো কোনো সাধারণ কন্যা নয়, তিনি যে দেবী! জগৎ জননী মা। কারণ ইতিপূর্বেই গত রাতে তিনি স্বপ্নে মায়ের দর্শন লাভ করেছেন, মা তার কাছে নিজের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন, মা তার দুই হাতে এক জোড়া শাঁখা পড়তে চেয়েছেন । এরপর থেকে মায়ের ইচ্ছাতেই সেখানেই মা পূজিত হতে থাকেন।
এরপর বহু দিন বাদে দক্ষিণ ভারত থেকে এই এলাকায় এক সাধকের আগমন ঘটে, নাম তার শিব চৈতন্য ব্রহ্মচারী। মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিনিই পাথর দ্বারা মন্দির নির্মাণ করেন। মন্দিরের বয়স আনুমানিক প্রায় ৫০০ শত বৎসরের অধিক। মন্দিরের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে মায়ের অষ্ট ধাতুর তৈরি মূর্তি। এখানে বলে রাখি যে বংশ পরম্পরায় দেওঘরিয়া পরিবারের সদস্যরাই কিন্তু এখানে পৌরহিত্য করে থাকেন।
এখানে পূজা দেওয়ার কোন বাঁধা ধরা নিয়ম নেই। যে কেউ লাইনে দাঁড়িয়ে মায়ের গর্ভ গৃহে প্রবেশ করাতে পারেন, সেখানেই নিজের নাম গোত্র অনুযায়ী পূজা দেওয়া হয়। দক্ষিনা যে যার সাধ্যমত দেবেন, কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
#মন্দির খোলার সময়
মনে মন্দির সকাল সকাল সকাল পাঁচটা। আবার বন্ধ হয় ঠিক সন্ধা সাতটা। সপ্তাহের প্রতিদিন খোলা। তবে প্রতি শনিবার ও প্রচার ভিড় হয়। দুর্গাপূজার তিনদিন ও কালি পূজার দিন এখানে মে বিশেষ পূজা হয়। এছাড়াও পায়েল বৈশাখের দিন পূজার জন্য লম্বা লাইন পড়ে যায়।
#কিভাবে যাবেন?
মধ্যবর্তী উত্তরে করে প্রমাণ আসানসোল। আসানল বাইপাস প্রশ্ন ধরে দ্বীপুর ডিহি চেস্টের আগে মাইথন পোঁও থেকে এই মন্দির। আসানসোল থেকে মন্দিরে যাওয়ার জন্য আছে, সংখ্যায় পর্যাপ্ত নয়। আসানসোল থেকে গাড়ি ভাড়া করে এখানে আসতে পারেন।
#কোথায় থাকবেন?
মন্দিরের কাছেই রয়েছে হোটেল। এছাড়াও মন্দির থেকে মাত্র ৩ সুবিধাই রয়েছে মাইথন ড্যাম। এখানে ছোট মাঝারি আলাদা আলাদাও রয়েছে কম খরচে থাকার বড় হোটেলের সুবিধা যুক্ত থাকবে গে হাউস।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন