হুগলির ত্রিবেণীতে দীর্ঘ ৭০৩ বছর পর শুরু হয়েছে কুম্ভ মেলা..!
Kumbh Mela Hooghly 2023 : হুগলির ত্রিবেণীতে দীর্ঘ ৭০৩ বছর পর শুরু হয়েছে কুম্ভ মেলা।
হুগলির ত্রিবেণী শিবপুর মাঠে দীর্ঘ ৭০৩ বছর পর শুরু হয়েছে কুম্ভমেলা।
সারাংশ
দীর্ঘ 703 বছর পর এইবার দ্বিতীয় বছর কুম্ভমেলার আয়োজন কর হয়েছে হুগলির ত্রিবেণী শিবপুরে।
বহু পূর্বে পৌষ মাসের মকর সংক্রান্তির দিন গঙ্গাসাগর মেলার পর মাঘ মাসের সংক্রান্তিতে এই কুম্ভ স্নানের আয়োজন হত।
দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছেন অসংখ্য নাগা সাধু ও সনাতন ধর্মের বিভিন্ন সাধু সন্তরা।
দীর্ঘ ৭০৩ বছর পর কুম্ভমেলার আয়োজন এবার হুগলির ত্রিবেণীতে। এবার দ্বিতীয় বছরে পদার্পণ করলো এই মেলা
শুধু ত্রিবেণীতেই নয় এই কুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয়েছে নদীর ওপারেও... অর্থাৎ গঙ্গা( ভাগিরথী )র ওপারে মাঝের চড়ে। নদীর দুই পাড় মিলিয়ে মেলায় আগত প্রায় আনুমানিক চার লক্ষাধিক মানুষ হবে।
পশ্চিম বঙ্গ হুগলী জেলার খবর : আমরা জানি যে, সাধারণ কুম্ভমেলা প্রতি চার বছর অন্তর অন্তর আয়োজিত হয়। প্রতি ছয় বছর অন্তর হরিদ্বার ও প্রয়াগে (প্রয়াগরাজ, এলাহাবাদ) অর্ধকুম্ভ আয়োজিত হয়। প্রতি বারো বছর অন্তর প্রয়াগ, হরিদ্বার, উজ্জ্বয়িনী ও নাসিকে পূর্ণকুম্ভ আয়োজিত হয়। বারোটি পূর্ণকুম্ভ অর্থাৎ প্রতি ১৪৪ বছর অন্তর প্রয়াগে আয়োজিত হয় মহাকুম্ভ।
তবে প্রয়াগ, হরিদ্বার, উজ্জ্বয়িনী ও নাসিক ছাড়াও ভারত বর্ষের আরও এক জায়গায় কুম্ভমেলা হতো। আর সেই জায়গা হলো আমাদের পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার ত্রিবেনীতে। মহামন্ডলেশ্বর পরমহংস স্বামী পরমাত্ম নন্দজী মহারাজের কথায়, রঘুনন্দনের প্রায়শ্চিত্ত তত্ব গ্রন্থে ত্রিবেণীর উল্লেখ পাওয়া যায়। সেই গ্রন্থে উল্লেখিত উত্তরে প্রয়াগ রয়েছে যা এলাহাবাদে। অন্যদিকে দক্ষিণের প্রয়াগ যেটা রয়েছে এই ত্রিবেণীতে বলে মনে করা হয়।
১, ২ বা ৫ বা ১০ বা ১০০ বছর নয়, একেবারে দীর্ঘ ৭০৩ বছর পর পুনরায় কুম্ভমেলার আয়োজন করা হয়েছে হুগলি জেলার বাঁশবেড়িয়ার ত্রিবেণীতে। শুধু ত্রিবেণীতেই নয়, সেই সঙ্গে এই কুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয়েছে নদীর ওপারেও... অর্থাৎ গঙ্গা( ভাগিরথী )র ওপারে মাঝের চড়ে। নদীর দুই পাড় মিলিয়ে মেলায় আগত প্রায় আনুমানিক চার লক্ষাধিক মানুষ হবে।
মেলার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে দেশ বিদেশের বিভিন্ন আখড়ার সাধু সন্তরা সহ দিন প্রতি প্রায় আড়াই লাখ মানুষের আগমন ঘটেছে মেলায়। পৌষ মাসের মকর সংক্রান্তির দিন গঙ্গাসাগর মেলার (Gangasagar Mela) পর মাঘ সংক্রান্তি অর্থ্যাৎ বিষুব সংক্রান্তিতে এই কুম্ভ স্নানের আয়োজন হত আজ থেকে বহু বছর আগে। কিন্ত মুঘল আমলের শেষের দিকে মুসলমান আক্রমনের পর বা ইংরেজ আমল চলাকালীন সেই ঐতিহ্য একেবারেই হারিয়ে যায়। কিন্তু বিশেষ বিশেষ দিনগুলিতে বহু মানুষ আসেন এই ত্রিবেণী (Tribeni) ঘাটে। প্রাচীন কালের বিভিন্ন পুঁথি পত্র সাহিত্য থেকে বিভিন্ন সময়ে গবেষণার দ্বারা জানা যায় এই কুম্ভস্নান ও মেলার কথা। বাংলা সাহিত্য ও কাব্যের মধ্যে তো আছেই। 1979 সালে এক বিদেশি 'এলান মরিনিসের' (Alan Morinis) অক্সফোর্ডে জমা করা এক তথ্য থেকে এই কুম্ভের কথা জানা যায়।
ত্রিবেণী কুম্ভমেলা স্নানের ঘাট
এছাড়াও সাধু সন্তদের কাছ থেকে বেশ কিছু বিষয় জানার পরই এই গত বছর থেকেই এই কুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয়। এই বছরও কুম্ভস্নানের আয়োজন করা হয়েছে। কয়েকশো নাগা সাধু ও সনাতন ধর্মের বিভিন্ন আখড়া থেকে এই সন্তরাও এখানে এ হাজির হয়েছেন। এবছর ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কুম্ভের আয়োজন করা হয়েছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার শাহী কুম্ভস্নানের জন্য দিনটিকে নির্বাচিত করা হয়েছে। এর জন্য কমিটি নিযুক্ত হয়েছে। সেই কমিটি তে বাঁশবেড়িয়া পুরসভার (Bansberia Municipality) চেয়ারম্যান আদিত্য নিয়োগী যুক্ত আছেন, সেই সঙ্গে বেশ কিছু সাধু সন্তরাও কমিটিতে নিযুক্ত আছেন।
পরবর্তীকালে মুঘল শাসনের সময় মুসলিম আক্রমণের ফলে এখানকার মন্দির এবং তীর্থস্থান গুলো নষ্ট হয়ে যায়। পন্ডিতরা এখান থেকে চলে যান। ত্রিবেণী যেহেতু গঙ্গার মুক্ত বেণী সেই কারণে এই জায়গাটার আলাদা গুরুত্ব ছিল। সেই কারণেই বিভিন্ন সংক্রান্তি সহ হিন্দু ধর্মের নানা আচার আচরণের জন্য স্নান করতে আসতেন বহু মানুষ। তবে এর মধ্যে বিষুব সংক্রান্তি স্নানকেই গ্রহণ করা হয়েছে। গত বছর কিছু সাধু সন্ত মানুষ এই ইতিহাসটাকে অনুসন্ধান করে এখানে আসেন। এখানে কুম্ভ স্নান হয়। সবমিলিয়ে প্রায় ৪০হাজার লোকের জনসমাগম হয়েছিল। এই বছর আবারও মহানির্মাণ আখড়ার প্রধান অনুমোদন দিয়েছেন। কিছু দিন আগে ভূমি পুজোতে নাগা সন্ন্যাসীরা এসেছিলেন। সপ্তর্ষি ঘাটে স্নান করেছিলেন। এই ঘাটটির আলাদা একটা মাহাত্ম্য আছে। কাগজের ইতিহাস বলতে যেটা পাওয়া যায় এলান মরিনিস অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় পাওয়া যায়। সেখানে তিনি ত্রিবেণীতে কুম্ভ মেলার উল্লেখ করেছেন। বাংলা সাহিত্যে স্নানের কথা পাওয়া গিয়েছে বহু জায়গায়। সেটা মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণব সাহিত্য ,শাক্ত সাহিত্য, সাধারণ বাংলা সাহিত্যেও মেলে এর উদাহরণ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন