এখানেই রয়েছে পূর্ব ভারতের বৃহত্তম শিবলিঙ্গ..! মহারাজা কৃষ্ণ চন্দ্রের স্মৃতি বিজড়িত শিব নিবাস।
এখানেই রয়েছে পূর্ব ভারতের বৃহত্তম শিবলিঙ্গ..! মহারাজা কৃষ্ণ চন্দ্রের স্মৃতি বিজড়িত শিব নিবাস।
সারাংশ :
* এখানে প্রতিষ্ঠিত যে শিবলিঙ্গ টি, তাহলো পূর্ব ভারতের সবথেকে বড় শিব লিঙ্গ! মহারাজা কৃষ্ণ চন্দ্রের হাত ধরে এই বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা হয়।
* শিব রাত্রির সময় এই মন্দিরে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে। ভীম চতুদর্শীর সময় আসে পাশের মন্দির সংলগ্ন এলাকা জুড়ে বিশাল মেলা বসে। শিবরাত্রি পর্যন্ত সেই মেলা চলে।
* শিব মন্দিরের পাশাপাশি এখানে রয়েছে প্রভু শ্রীরামের মন্দির। মন্দিরে কষ্টি পাথরের নির্মিত ভগবান শ্রী রামের বিগ্রহ আর অষ্ট ধাতুর মাতা সীতার বিগ্রহ রয়েছে।
আজ আমি গল্পে গল্পে আপনাদের নিয়ে যাবো নদীয়ার মাঝদিয়া চুর্ণী নদীর তীরে মহারাজা কৃষ্ণ চন্দ্রের স্মৃতি বিজড়িত শিব নিবাসে। এখানে বাবা ভোলানাথ শিবের নিবাস, তাই এই স্থান টির নাম শিব নিবাস। তবে স্থানের নামকরণ নিয়ে দ্বিমত থাকলেও থাকতে পারে, তাতে কিছু আসে যায় না। যাই হোক, এখানে উল্লেখ যোগ্য যে, এখানে প্রতিষ্ঠিত শিবলিঙ্গ টি পূর্ব ভারতের সবথেকে বড় শিব লিঙ্গ! মহারাজা কৃষ্ণ চন্দ্রের হাত ধরে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার পর চুর্ণী নদী দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে। ধীরে ধীরে শিব নিবাস এখন হয়ে উঠেছে এই জেলার প্রাচীন তীর্থ ক্ষেত্র গুলির মধ্যে অন্যতম। শিব রাত্রির সময় এই মন্দিরে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে। ভীম চতুদর্শীর সময় আসে পাশের মন্দির সংলগ্ন এলাকা জুড়ে বিশাল মেলা বসে। শিবরাত্রি পর্যন্ত সেই মেলা চলে। শিব মন্দিরের পাশেই প্রভু শ্রীরাম ও মাতা সীতার রয়েছে। মন্দিরের সেই বিগ্রহ সত্যি দেখার মতো। আর এ সবই হয়েছে নদীয়ার অধিপতি মহারাজা কৃষ্ণ চন্দ্রের হাত ধরে।
শিব নিবাসের বিগ্রহর প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দের মতামত সম্পর্কে যা জানা যায় তা হলো, মারাঠা বর্গীদের আক্রমণের হাত থেকে নিজ সাম্রাজ্যের রক্ষার্থে দেওয়ান রঘুনন্দন মিত্রের পরামর্শে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় কৃষ্ণ নগর থেকে তার রাজধানী চুর্ণী নদীর তীরে এই শিব নিবাসে স্থানান্তরিত করে ছিলেন। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরেই চুর্ণী নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল ১০৮ টি শিব মন্দির। বর্তমানে ঐ ১০৮টি মন্দিরের আর কোনো অস্তিত্ব নেই। কালের নিয়মে একে একে সব মন্দির ই আজ ধংস প্রাপ্ত ! রাজা তার বড় রানীর ইচ্ছা কে সম্মান জানিয়ে তার উদ্দেশ্যে ১৭৫৪ খ্রীষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন এই স্থানের সব থেকে বড় মন্দির টি । যার নাম রাজ রাজেশ্বর।
আর রাজ রাজেশ্বর মন্দির প্রতিষ্ঠার ঠিক সাত বছর পরেই ছোট রানিমার জন্য রাজা কৃষ্ণচন্দ্র আরও একটি শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন, যার নাম রাজ্ঞীশ্বর। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সেই সময় রাম-সীতার মন্দিরও রাজার হাত ধরেই প্রতিষ্ঠা লাভ করে ছিল।
রাজ রাজেশ্বর মন্দির উচ্চতায় ১২০ ফুট! যা প্রায় বারো (১২) তলার সমান। শিব লিঙ্গের উচ্চতা ৯ ফুট, আর ব্যাসার্ধ ২২ফুট ১০ইঞ্চি। পূর্ব ভারতের সব থেকে উঁচু বিগ্রহ হিসেবে প্রসিদ্ধ এই শিব লিঙ্গ। আর পাশের অর্থাৎ রাজ্ঞীশ্বর শিব মন্দিরটির উচ্চতা ৮০ফুট। শিব লিঙ্গের উচ্চতা ৭ ফুট, আর ব্যাসার্ধ ১৫ ফুট। শিব লিঙ্গের মাথায় দুধ জল ঢালার জন্য সিঁড়ির ব্যবস্থা করা আছে। এই মন্দিরের পাশেই রয়েছে প্রভূ রাম মাতা সীতার মন্দির। এই মন্দিরে কষ্টি পাথরের নির্মিত ভগবান শ্রী রামের বিগ্রহ আর অষ্ট ধাতুর মাতা সীতার বিগ্রহ রয়েছে।
#পূজোর সময় :
প্রতিদিন মন্দির খোলার সময় সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত, আর বিকেল ৪টে থেকে রাত ৮ পর্যন্ত। প্রতি সোমবার মন্দিরের পূজারি ভক্ত দের নামে নামে সংকল্প করে পূজো করিয়ে দেন। তাই ওইদিন মন্দিরে পূজার ভির লেগে থাকে। আগে থেকে যোগাযোগ করে এলে মন্দিরের ভোগ খাওয়া যায়। ভোগের মালসা পিছু মূল্য ১০১/- টাকা। শিব রাত্রির সময় এই মন্দিরে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে। এছাড়াও প্রতিবছর তারকেশ্বরের মতো এখানেও হাজার হাজার ভক্ত গন শ্রাবণ মাসে নবদ্বীপ গঙ্গার ঘাট থেকে পায়ে হেঁটে কাঁধে করে বাঁকে জল নিয়ে এসে শিবের মাথায় ঢালে। এছাড়াও চৈত্র মাসে নীল পূজো, রাম নবমীতে রাম-সীতার মন্দিরে পূজো হয়।
#পথ নির্দেশ :
শিয়াল দহ স্টেশন থেকে গেদে লোকাল করে চলে আসুন মাঝদিয়া স্টেশন। অথবা তার আগের স্টেশন তারক নগর হল্টে নেমে সেখান থেকে মটর ইঞ্জিন ভ্যান, রিক্সা, অটো বা টোটো করে সহজেই মন্দিরে যাওয়া যায়। তবে মন্দির সংলগ্ন আশে পাশের এলাকায় কোনো থাকা বা খাওয়ার কোনো হোটেলের ব্যবস্থা নেই। অন্যান্য তীর্থ ক্ষেত্রের মতো ফুল-মিষ্টির দোকানও এখানে নেই। এছাড়া কৃষ্ণ নগর থেকেও বাস বা গাড়ীতে এই মন্দিরে যাওয়া যায়। কৃষ্ণ নগর থেকে শিব নিবাসের দুরত্ব মাত্র ২৬ কিলোমিটার। তবে এখানে আসার সময় একটা ছাতা অবশ্যই সঙ্গে রাখবেন, কেন? না থাক বাকিটা আর নাই বা বললাম, আপনি নিজেই অনুভব করবেন।
* অবশ্যই এই ২০২৩ সালের শিবরাত্রির সময়কার ছবি ও ভিডিও সহ সমস্ত আপডেট নিয়ে শিবরাত্রির পরের দিন ফিরছি। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন ঈশ্বরের কাছে এই কামনা করে আজকের প্রতিবেদন এখানেই শেষ করছি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন