চলুন ঘুরে আসি চুঁচুড়ার প্রাচীন বিখ্যাত ঐতিহাসিক মা দয়াময়ী কালি বাড়ি ।
চলুন ঘুরে আসি চুঁচুড়ার প্রাচীন বিখ্যাত ঐতিহাসিক মা দয়াময়ী কালি বাড়ি ।
চুঁচুড়ার খড়ুয়া বাজার থেকে নেতাজি সুভাষ রোড ধরে সোজা ঘড়ির মোড় অবধি প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে অবস্থিত হুগলী জেলার বৃহত্তম পাইকারী ও খুচরো বাজার। সেই জন্য এলাকাটা দেখলে মনে হয় একটু ঘিঞ্জি টাইপের। এই এলাকা হুগলী জেলার সদর চুঁচুড়া শহরের অন্যতম বানিজ্য কেন্দ্র বটে। হুগলী চুঁচুড়ার প্রাণকেন্দ্র ঘড়ির মোড় থেকে খড়ুয়াবাজারের দিকে মিনিট পাঁচেক কিছুটা এগিয়েই আসতেই বাঁ দিকে পড়বে একটি ইটা রঙের বিশাল দরজা। এর ওপরেই লেখা রয়েছে ‘দয়াময়ী কালী মন্দির’।
মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশ দ্বারের বাম দিকে ও ডান দিকে দুটি মার্বেল ফলকে যথাক্রমে বাংলা ও হিন্দি তে লেখা রয়েছে, “দয়াময়ী কালী মন্দির। যার সেবাইত গোপালরাম পাঠক।” মন্দিরটি পরিচালনা করেন এইচ ইউ এফ ট্রাস্ট বোর্ড।
বাদশাহ আকবরষোড়শ শতকের শেষ ভাগে প্রায় সম্পূর্ণ ভারতবর্ষ ও বাংলায় শাসন কায়েম করেছেন মুঘল সম্রাট বাদশাহ আকবর। যদিও এই সুবিশাল সাম্রাজ্যের দেখভাল করতে তিনি অনেকটাই নির্ভরশীল ছিলেন আঞ্চলিক সামন্ত জমিদার অর্থাৎ জায়গীরদারদের ওপর। হুগলীও ছিল না তার ব্যতিক্রম। তবে তখন ‘হুগলী’ নামে এই অঞ্চলটি পরিচিত ছিল কিনা, সে নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ ছিল বা এখনও আছে। মোঘল সম্রাট আকবরের রাজস্ব সংক্রান্ত বিষয়ের প্রধান পরামর্শদাতা টোডরমল এই অঞ্চলটির যাবতীয় শাসনভার সঁপেছিলেন এক আঞ্চলিক জায়গীরদার জিতেন রায়কে। জিতেন রায় ছিলেন মাতৃ সাধক ও শাক্তধর্মের একনিষ্ঠ অনুসারী। তিনি জায়গীর পাবার পর গড়ে তুললেন তার আরাধ্যা মায়ের মন্দির। তৎকালীন সেই মন্দিরই হলো আজকের এই অঞ্চলের প্রাচীনতম কালী মন্দির যা বর্তমানে চুঁচুড়ার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত দয়াময়ী কালীবাড়ি নামেই ভক্তদের কাছে অধিক সুপরিচিত।
টোডর মল
বর্তমানে ভগ্নপ্রায় মন্দিরটির আমূল সংস্কার হয়েছে, ফলে তৎকালীন স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শনগুলি কালের প্রভাবে মুছে গিয়েছে ঠিকই, তবে এটা বুঝতে অসুবিধা হয়না যে মন্দিরগুলির গঠনে রেখা দেউল স্থাপত্য রীতির যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।
এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে পশ্চিম বাংলার দেবালয় গুলো মূলত ৪(চার) ধরনের হয়, যেমন ১। চলা, ২। রত্ন, ৩। শিখর বা রেখ, ৪। দালান ।
মূল মন্দিরটি ভবতারিণী জগৎজননী কালীর। মাতৃ মূর্তির আকৃতি খুব একটা বড় নয়। গর্ভ গৃহের মাতৃ মূর্তির উচ্চতা প্রায় সাড়ে তিন ফুট কষ্টিপাথরে নির্মিত। মাতৃকামুর্তির জিহ্বা ও গয়না অলঙ্কার দিয়ে গড়া। মূর্তিটি সেই সময়কার ভাস্কর্য শিল্পের নিদর্শন বহন করে। বাস্তূ অনুসারে উত্তর পূবদিকে অর্থাৎ ঈশান কোণে অবস্থিত দক্ষিণ পশ্চিমমুখী এই কালী মন্দির। তার বাম দিকে অর্থাৎ পূর্বদিকে একই সারিতে চারটি ভগবান শিবের মন্দির অবস্থিত। সবকটি মন্দিরেই নাটমন্দির অনুপস্থিত। কিন্তু মন্দিরের সামনে রয়েছে সুবিশাল খোলা উঠোন।
স্থানীয়দের মতে, এখানে দয়াময়ী রূপে অধিষ্ঠিত কালিকা অত্যন্ত জাগ্রত।
চুঁচুড়া শহরের এই প্রাচীনতম মন্দির আঞ্চলিক মানুষের কাছে যে ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ তা এই মন্দিরে প্রতিদিনের ( বিশেষ করে শনি ও মঙ্গলবার এছাড়াও বিশেষ অমাবস্যা তিথিতে ) জনসমাগম দেখে সহজেই আন্দাজ করা যায়।
দীপান্বিতা অমাবস্যা, কৌশিকী অমাবস্যা, নববর্ষে ভক্তদের ঢল থাকে চোখে পড়ার মতন।
কথিত আছে, এই ভক্ত সমগমের মধ্যে একদিন উপস্থিত ছিলেন আকবরের সেনাপতি মানসিংহ স্বয়ং। তিনি মন্দির প্রতিষ্ঠার পরে রাজস্থান থেকে পুজো নিবেদন করতে এই মন্দিরে আসেন। এই মন্দিরের ভোগের চাহিদাও প্রচুর ও দূর দুরান্ত থেকে ভক্তরা ভোগ সংগ্রহ করতে মন্দিরে এসে হাজির হন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন