জানুন শালগ্রাম শিলা ও তার জন্ম স্থান মুক্তি নাথ ধামের মাহাত্ম্য। - DHAR ARTS

Breaking

dhar arts


 


 


বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

জানুন শালগ্রাম শিলা ও তার জন্ম স্থান মুক্তি নাথ ধামের মাহাত্ম্য।

অভাব যেন কিছুতেই পিছু ছাড়েনা! আয় ব্যয়, স্থিতির কোনো সমতা নেই , সর্বক্ষণ মনে হয় আয়ের তুলনায় ব্যায় বেশি, ফলে স্থিতি প্রায় শুন্য! পরিবারের সদস্যদের রোগ ব্যাধি কি লেগেই আছে? এর মূল কারণ কিন্তু আপনার গৃহে নেগেটিভ শক্তির আধিক্য। যাই হোক এবার সমস্ত দুর্ভাবনা দুর করে নিজের মনকে পজিটিভ করুন ।


হিন্দু শাস্ত্র মতে, শনিবার সন্ধেবেলা আপনার গৃহের অঙ্গনে তুলসী গাছের তলায় একটি শালগ্রাম শিলাপাথর রাখুন। দেখবেন প্রভু শ্রী হরির কৃপায় আপনার সকল কষ্ট অচিরেই লাঘব হবে। 



শালগ্রাম শিলাকে স্বয়ং ভগবান বিষ্ণুর সাক্ষাৎ স্বরূপ বলে মনে করা হয়। তাই যে গৃহের অঙ্গনে মা তুলসীর সঙ্গে শালগ্রাম শিলা থাকে, সেই গৃহে কখনওই রোগব্যাধি, দারিদ্র্যতা প্রবেশ করতে পারে না!

শুধু দারিদ্র্যতাই যে দূর হবে এমনটা নয়, তুলসী গাছের গোড়ায় শালগ্রাম শিলা রাখলে পারিবারিক অশান্তি দূর হবে, দাম্পত্য কলহ মিটবে, কার্যক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত সাফল্য পাবেন। শ্রী হরি ও মাতা তুলসীর কৃপায় প্ররিবারের সকল সদস্যদের শরীর স্বাস্থ্যও থাকবে ভাল!

 এবার এই শালগ্রাম শিলা সম্পর্কে কিছু তথ্য অতি সংক্ষেপে আলোচনা করবো। এই শিলার প্রকৃত স্বরূপ কি ? ও কোথায় পাওয়া যায় এই শালগ্রাম শিলা?  শাস্ত্রে উল্লেখিত -

"অহঞ্চ শৈলরূপী চ গণ্ডকীতীর সন্নিধৌ। অধিষ্ঠানং করিষ্যামি ভারতে তব শাপতঃ।। বজ্রকীটাশ্চ কৃময়ো বজ্রদংষ্ট্রাশ্চ তত্র বৈ। মচ্ছিলাকুহরে চক্রং করিষ্যন্তি মদীয়কম।। ...গণ্ডক্যাশ্চোত্তরে তীরে গিরিরাজস্য দক্ষিণে......( ব্রহ্মপুরাণ, প্রকৃতি খণ্ড )।

অর্থাৎ.........

পুরাণে আছে, গিরিরাজ হিমালয়ের দক্ষিণে গণ্ডকীর উত্তরে দশ যোজন বিস্তৃত অঞ্চল হল – হরিক্ষেত্র। সাক্ষাৎ ভগবান শ্রী হরি বিষ্ণু এখানে বিরাজ করছেন শালগ্রাম শিলা রূপে। মহাভারতেও এই মহাতীর্থের উল্লেখ পাওয়া যায়। ভীষ্মের তীর্থ পরিক্রমার সময়ে মহর্ষি পুলস্ত্য মুনি তাঁকে গণ্ডকী ও শালগ্রাম তীর্থ দর্শনের উপদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো — সংখ্যা গরিষ্ঠ ভারতীয় হিন্দুদের কাছে আজও এই হরিক্ষেত্র অজানা।


শ্রী বিষ্ণু ধাম মুক্তি নাথ, নেপাল।

ভগবান মুক্তি নাথ

বলা হয় সম্পূর্ণ পৃথিবীতে একমাত্র মধ্যে নেপালের হিমালয়ের দক্ষিণে অবস্থিত , সমুদ্র পীষ্ঠ থেকে ৬,২৬৮ মিটার (২০,৫৬৪ ফিট) ফুট উচ্চতায়, যেখানে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় হাঁটা পথ, সেখানে গণ্ডকী বা কালী-গণ্ডকী নামক নদীতেই একমাত্র প্রকৃত শালগ্রাম শিলা পাওয়া যায়, তাই এখানে  এই নদী আবার নারায়ণী নামেও প্রসিদ্ধ! উল্লেখযোগ্য এই নদী নেপালের প্রধান নদী। এই নদীর গিরিখাতই হলো পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত গুলোর মধ্যে অন্যতম! হিমালয়ের দক্ষিণাংশে মধ্য নেপালের  পশ্চিমে ধবলগিরি বা ধৌলগিরি ও পূর্বে অন্নপূর্ণা পর্বত। এই দুই পর্বতের মধ্যে যে গভীরতম খাত রয়েছে, সেটাই হলো গন্ডকী নদী উপত্যকা গিরিখাত।
                              কালি গন্ডকী নদী

এই নদীর জল সচ্ছ এবং কপোতাক্ষ অর্থাৎ সচ্ছ হলেও, কালো তার জল,  এমন জায়গাই হল শ্রী হরি তীর্থ বা মোক্ষ লাভ, মুক্তি-তীর্থ-ক্ষেত্র বা মুক্তিনাথ। অর্থাৎ যিনি মুক্তি দাতা। একমাত্র এই নদীর উপত্যকায় শালগ্রাম শিলা পাওয়া যায়।  এই নদী ছাড়া আর কোনো জায়গায় শালগ্রাম পাওয়া যায় না। তবে হিমাচল প্রদেশের ও ইউরোপের কিছু অঞ্চলে এই ধরনের শিলা পাথর দেখতে পাওয়া যায়।  তবে সনাতন ধর্মে তা পূজিত নয়।

আদতে এই শালগ্রাম শিলা হলো নেপালের মুক্তি নাথ, কালী গন্ডকী বা নারায়ণী নদীর এক বিশেষ ধরনের জীবাশ্ম পাথর। শিব লিঙ্গ যেমন ভগবান শিবের প্রতিক হিসাবে পূজিত হয়। ঠিক সেভাবেই ভগবান শ্রী বিষ্ণুর প্রতিক চিহ্ন হিসাবে শালগ্রাম শিলা কে পূজা করা হয়ে থাকে। যেহেতু  নেপালের মুক্তি নাথ কালি গন্ডকী নদী ভিন্ন আর কোথাও এই শিলা দেখতে পাওয়া যায় না । তাই গন্ডকী নদীর শিলাই আসল শালগ্রাম বা শালিগ্রাম শিলা।


এই শিলা ভাঙা বা ফাটা হতে পারে, এবং প্রসঙ্গত উল্লেখ্যযোগ্য যে এই নদীর সকল শিলাই শালগ্রাম শিলা। ভাঙ্গা টুকরো হলেও এর পূজা করা চলে। এই শিলার মধ্যে চক্র চিহ্নিত থাকে। এই শিলা পাথরে চক্রের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে এই শিলা এক চক্রী, দ্বি-চক্রী, বা বহু চক্রী হতে পারে

এর মধ্যে এক চক্র শিলা প্রায় উনিশ রকমের। আবার দ্বিচক্র শিলা প্রায় আশি রকমের হয়। এরপরে আরো বিভিন্ন রকমের আছে। যদি পঁচিশটির বেশি চক্র থাকে, তাহলে বুঝতে হবে তিনি বিশ্বম্ভর হিসাবে চিহ্নিত এবং পূজিত। এর উপরে আর কোনো নাম নেই। আকৃতি রঙ ও রূপ অনুসারে  সাক্ষাৎ পরব্রহ্ম ভগবান শ্রী নারায়ণের স্বরূপ এই শিলা বিভিন্ন নামে প্রসিদ্ধ। যেমন দামোদর, শ্রীধর, বামন, নারায়ণ, লক্ষ্মী নারায়ণ, জনার্দন বা লক্ষ্মী জনার্দন ও রাজ রাজেশ্বর ইত্যাদি শিলা অধিক প্রচলিত। তবে অনেক শিলাই দুর্লভ ও  সঠিক নামে চেনা অত্যন্ত দুষ্কর দুরূহ কাজ। তাই সকল প্রকার শিলার মধ্যে দামোদর,  জনার্দন বা লক্ষ্মী জনার্দন বহুল প্রচলিত।

               পুুুরীর জগন্নাথ ধামের শালগ্রাম শীলা 

শালগ্রাম শিলার গঠন শৈলী কেমন?

শালগ্রাম শিলা ছোট বড় বিভিন্ন মাপের হতে পারে। সাধারণত একটি আমলকির মতো মাপ থেকে, একটি বড় বেলের মতো মাপের সুন্দর সুগঠিত কৃষ্ণ বর্ণ শিলাই পূজার জন্য উপযুক্ত।  সেই শিলা যেন সুন্দর ভাবে প্রতিস্থাপিত হয়, তবেই সেই শিলা পূজ্য। খেয়াল রাখতে হবে শিলা যেন ভগ্ন-কর্কশ বা খয়েরী, উগ্র লাল বর্ণের না হয়। আবার এটাও মনে রাখা জরুরী, শিলা যে সবসময় নিটোল মসৃন গোল হবে এমনটা ও নয়, কারণ প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট বা গঠিত বস্তু সবসয়ম নিটোল মসৃন গোল হয়ও না। শুরুতেই আমি এই পাথরের পরিচিতি দিতে গিয়ে জীবাশ্মের কথা বলেছিলাম, ঐ জীবাশ্নই হলো শালগ্রাম শিলার চক্র চিহ্ন। মনে রাখবেন চক্র চিহ্ন হীন শিলা কিন্তু পূজ্য নয়। 




এবার প্রশ্ন ওই চক্র কি ভাবে দেখা যাবে? 

এই চক্র শিলার বাইরে গায়ে থাকতে পারে আবার ভিতরেও থাকতে পারে। যদি ভিতরে থাকে তবে শিলার গায়ে কোন ছিদ্র বা উন্মুক্ত যায়গা থাকবে যেখান দিয়ে ভিতরের চক্র অর্থাৎ বজ্র কীট বা ফসিলটি দেখা যায়। তবেই সেই শিলা পূজ্য।

 নমষ্কার সকলে ভালো থাকবেন। আজ এই পর্যন্তই।

জ্যোতিষী, তন্ত্র, বাস্তু, ও ফেংশুই  সমন্ধে আরও নানা রকম টিপস পেতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল (DHAR ARTS) টি সাবস্ক্রাইব করতে ভুলবেন না। এবং আমাদের ফেসবুক পেজ অবশ্যই ফলো করুন, আর লাইক দিন।

                                                 ধন্যবাদ......।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন