স্বপ্ন দোষ ? কালসর্প দোষ ? বশীকরণ বা কর্মে সাফল্য চান? তাহলে জানুন ময়ুর পালকের কিছু অসামান্য গুনাগুন!

peacock feather benefits

আমাদের জীবনে বেঁচে থাকার জন্য তিনটি শর্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য, বস্ত্র, ও বাসস্থান। বাসস্থান কেই আমরা প্রধানতঃ বাড়ি বা বাস্তু বলে থাকি। আপনার বাড়ি যদি বাস্তু শাস্ত্রের বিপরীত হয়, অর্থাৎ আপনার বাস্তু যদি দোষ যুক্ত হয়, তাহলে অবশ্যই যদি সম্ভব হয়, তাহলে শীঘ্রই আপনার বাস্তুকে দোষ মুক্ত করুন। এমন অনেক সময়ে দেখা গেছে যে, কোন বাড়িতে ভূল বশতঃ এমন কিছু বাস্তু দোষ রয়েছে, যে চাইলেও সেই দোষ থেকে মুক্ত হওয়া অত সহজ নয়। যেমন ধরুন, আপনি বাড়ি তৈরি করার সময়ে আপনি আপনার শৌচাগার ভূল বশতঃ ঈশান ( উত্তর - পূর্ব ) কোণে তৈরি করে ফেলেছেন! এটা কিন্তু খুব বড় একটা ভুল হয়ে গেছে। আপনি চাইলেও এখন আর এই ভুল শোধরাতে পারবেন না। তবে সমস্যা যখন তৈরী হয়, তার সমাধানও নিশ্চয়ই থাকে। তবে এই বিষয়ের ওপর পরে অন্য কোনো সময়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবো। আপনার বাস্তু এই রকম দোষ যুক্ত হওয়ার কারণে, আপনার বাড়িতে প্রতিনিয়ত নেগেটিভ শক্তি তৈরী হয়। যার ফলে আপনার ব্যক্তিগত জীবনে আপনাকে প্রতিনিয়ত অনেক প্রতিকূলতার মুখে পড়তে হয়। এই নেগেটিভ শক্তি কে ব্যহত করতে, আর পজেটিভ শক্তির বৃদ্ধি ঘটাতে আমি বিগত বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে কিছু বাস্তু টিপস নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রতিবেদনেও সেই ধারা অব্যাহত......!



এই প্রতিবেদনে আমার আলোচনার বিষয় ময়ুরের পালক ঃ ময়ুরের পালকের সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। ময়ুর আমাদের জাতীয় পাখি। ময়ুরের সৌন্দর্যের তুলনা ময়ুর নিজেই। বর্ষাকালে যখন পেখম ছড়িয়ে ময়ুর নৃত্য করে, তখন মনে হয় যেন, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তাঁর সম্পূর্ণ সৃষ্ট প্রকৃতির সকল রূপ, রঙ দিয়ে যেন ময়ূর কে ঢেলে সাজিয়েছেন। 

yegeshwar sri krishna meditation


সর্বেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুকুটে ময়ূরের পালক শোভা পায়। পুরাণে কথিত আছে দেবরাজ ইন্দ্র নাকি ময়ূর সিংহাসনে বসতেন। ভগবান শিব ও মা পার্বতীর পূত্র দেব সেনাপতি কার্তিকেওর প্রিয় বাহন তার ময়ুর। আবার বিদ্যার দেবী মা সরস্বতীর বাহন হাঁস হলেও, ময়ুরকে তার আর এক বাহন বলে মনে করা হয়। নীলকন্ঠী ময়ূর তার বাহন হওয়ায় মা সরস্বতীর এই রূপকে আমরা নীল সরস্বতী বলি।

lord ganesh on  peacock, feather benefits, mayureshwar ganesh


আবার ভগবান শ্রী গনেশের একটি রূপ ময়ূরেশ্বর গনেশ। সেই রূপে গনেশের বাহন ময়ূর। আমরা যদি, মুঘল আমলের ভারতের ইতিহাস নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করি, তাহলে দেখবো মুঘল আমলের সবচেয়ে কলা - সংষ্কৃতি প্রিয় ও বিলাসী রাজা ছিলেন সম্রাট শাহজাহান। জাহাঙ্গীরের পরেই তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন। তার আমলে তাজমহল ছাড়া আরও একটি কীর্তি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য, তা হলো তার তখ্ত-এ-তাউস বা তার বিখ্যাত ময়ূর সিংহাসন! সম্রাট শাহজাহানের অতি প্রিয় এই ময়ূর সিংহাসন। বিখ্যাত কোহিনূর হীরা, এই ময়ূর সিংহাসনেই খোচিত ছিল। ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর পারস্যের সম্রাট নাদির শাহ ভারত আক্রমণ করলে, কোহিনূর সহ বিখ্যাত ময়ূর সিংহাসন লুঠ করে নিজের দেশে নিয়ে যান। কোহিনূরের বর্তমান অবস্থান জানা গেলেও ময়ূর সিংহাসনের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। যাই হোক, এই ময়ূরের পালকের তৈরী যেকোনো জিনিস আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পুরাতন কালের দিকে যদি আমরা ফিরে তাকাই, তাহলে দেখবো বিভিন্ন মহর্ষি ও ঋষি মুনিরা ময়ূরের পেখমের একটি অংশ পালককে লেখনী হিসাবে ব্যবহার করতেন। পুরাকালে ময়ূরের পেখমের অংশ পালক ব্যবহার করেই, বিভিন্ন ধর্মশাস্ত্র ও গ্রন্থাদি লেখা হয়েছে। তাই বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ, জ্যোতিষ ও বাস্তু শাস্ত্রে ময়ূরের পালককে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা এটা অনেকেই জানিনা , এই ময়ূরের পালক বাড়ির কোথায় কিভাবে রাখলে অনেক প্রকার বাস্তু দোষ নাশ হয়।

এইবার আমি এই বিষয়ের ওপর আলোচনা করছি।


প্রথমেই বলবো আপনার বাড়ির দরজা যদি বাস্তু অনুসারে বিপরীত দিকে হয়, তাহলে তিনটি ময়ূরের পালক দরজার ওপর লাগিয়ে দিন। তার নিচে বা দরজার দুই পাশে ছোট বাল গোপাল ও বাল গনেশের মূর্তি বা স্টিকার জাতীয় ফটো লাগিয়ে দিন। এতে অশুভ শক্তি গৃহে প্রবেশে বাধা পাবে। 


যদি আপনার বাড়িতে একতা বা পারিবারিক বিবাদ থাকে, বা আপনার বাড়িতে যদি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না থাকে, তাহলে আপনার বেডরুমের দক্ষিণ পশ্চিম কোণে একটি ফুলদানির মতো কিছু রাখুন, তার মধ্যে একজোড়া ময়ূরের পালক এনে রেখে দিন। 



অথবা আপনাদের বিবাহের অ্যালবামের মধ্যে একজোড়া ময়ূরের পালক লুকিয়ে রাখুন, দেখবেন আপনাদের মধ্যে আবার পূর্বের ন্যায় ভালবাসা ফিরে আসবে।



ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, প্রায় বেশিরভাগ মা বাবারই অভিযোগ থাকে, যে তার সন্তান ঠিক মতো পড়াশোনা করছে না, বা পড়াশোনায় অমনোযোগী। এক্ষেত্রে বলবো, আপনার সন্তান যদি বিদ্যার্থী হয়, যদি তার পড়াশোনা করার আলাদা রুম থাকে, তাহলে সেই ঘরের ঈশান কোণ অর্থাৎ উত্তর পূর্ব কোণের দেওয়ালে অথবা উত্তর দিকের দেওয়ালে অথবা উত্তর কোণের পূর্ব দিকের দেওয়ালে  একটি কাঠের তক্তা বা সিমেন্ট দিয়ে একটি তাক নির্মাণ করুন, তারপর সেখানে মা সরস্বতীর মূর্তি বা ছবি সহ পূজার আসন প্রতিষ্ঠা করুন। এইটি সরস্বতী পূজার দিন থেকে করতে পারেন, বা পূজিত মুর্তি বা ফটো এনেও রাখতে পারেন। এরপর সেই মূর্তির সামনে স্নান করে শুদ্ধ হয়ে প্রতি দিন সকাল ও সন্ধ্যায় পড়াশুনা করার পূর্বে আপনার সন্তানের ( বিদ্যার্থী ) দ্বারা ধূপ বাতি প্রজ্জ্বলিত করবেন। এর ফলে আপনার সন্তানের মধ্যে আধ্যাত্মিক চেতনা প্রকাশ পাবে, এবং মন শান্ত হবে। মায়ের মূর্তির সামনে একটি দোঁয়াত রেখে দিন, সেই দোঁয়াতে অল্প পরিমাণ কাঁচা দুধ মিশ্রিত গঙ্গাজল রেখে দিন, এটা অবশ্যই কিছু দিন অন্তর পাল্টে ফেলতে হবে। এরপর সেই দোঁয়াতে একটি ময়ূরের পালক রেখে দিন। এছাড়াও আপনার সন্তানের বইয়ের ব্যাগে, কোনো বই বা খাতার ভাঁজে একটি ময়ূরের পালক রেখে দিন, এরপর দেখুন চমৎকার! 



আপনি হয়ত, অনেক সময় লক্ষ্য করে থাকবেন যে, আপনার আদরের ছোট্ট সন্তানটি মধ্য রাত্রিরে ঘুমের ঘোরে মাঝে মধ্যেই চমকে ওঠে, বা অনেক সময় চিৎকার করে কান্না জুড়ে দেয়। এর কারণ নিশ্চয়ই কোনো ভয়ার্ত দুঃস্বপ্ন! আপনিও হয়তো ঘুমের ঘোরে কখনো এমন দুঃস্বপ্ন দেখে ঠিক এমন ভাবেই আঁৎকে উঠেছেন। যার ফলে ঘুমের ব্যাঘাত তো ঘটেই, এবং এর দুষ্প্রভাব শরীর ও মনের দুয়ের ওপরেই পড়তে পারে। 

peacock feather benefits-baby crying

এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় কি? এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় হলো, রাত্রিরে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিছানায় গঙ্গা জলের ছিঁটে দিন। তার পর মাথার বালিশের নিচে একটি ময়ূরের পালক রেখে দিন, দেখবেন আর কোনো ভয়ার্ত দুঃস্বপ্ন আসবে না। আপনি হয়তো লক্ষ্য করছেন যে আপনার সন্তানের প্রতি কোনো নজর দোষ লেগেছে, বা নজরের ফলে আপনার সন্তানের শরীর দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। আপনি হয়তো ভাবছেন কোন ওঝা-তান্ত্রিকের কাছে নিয়ে গিয়ে ঝাড় ফুক করবেন। কিন্তু আমি বলবো তার আর দরকার নেই। 

peacock feather benefits

আপনাকে একটি কাজ করতে হবে। আপনাকে রূপার একটি মাদুলি কবজ নিতে হবে, সেই কবজের মধ্যে ময়ূরের পালকের কিছু অংশ নিয় প্রবেশ করাতে হবে। তারপর কবজের মুখটা মোম দিয়ে আটকে দেবেন। তারপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে স্পর্শ করে লাল বা সাদা সূতা দিয়ে, আপনার সন্তানের গলায় বা হাতে পরিয়ে দিন। দেখবেন আর কখনো কোনো অশুভ শক্তি আপনার সন্তানের ধারে কাছে ঘেঁষতে পারবে না।


আপনি যদি ব্যবসায়ী হন, বা শুভ কর্মে বাহির হবেন বলে স্থির করেছেন, তাহলে আপনার কাছে সর্বদা একটি ময়ূর পালক রেখে দিন, দেখবেন কাজে সফলতা আসবেই। আপনার রাহু দোষ থাকলে তাও নষ্ট হয়ে যাবে। 

kalsarp dosh, peacock feather benefits

যদি আপনার কালসর্প দোষ বা সর্পাঘাতের ভয় থেকে থাকে, বা যদি আপনার বাড়িতে সাপের উপদ্রব থাকে, তাও কেটে যাবে। কারণ ময়ূরের খাদ্য সাপ, তাই সাপ ময়ূরকে সর্বদা ভয় পায়। তবে একটা কথা খেয়াল রাখবেন, ময়ূর পালক যেন নিচে পড়ে না থাকে। কারণ ময়ূর পালক স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজ মস্তকে ধারণ করেন। তাই নিচে পড়ে থাকলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেই অপমান করা হয়! ও মা লক্ষ্মী  ক্রুদ্ধ হয়!  এতে আপনার উন্নতি ব্যহত হতে পারে। কোনো শুভ দিন দেখেই ময়ূরের পালক কিনবেন। কেনার সময়ে দেখবেন ডাটা, অর্থাৎ সাদা কাঠিটি যেন ভাঙা না থাকে। কেউ যদি অজান্তে আপনাকে এটা দেয় সেটা সবচাইতে ভালো।



সব শেষে একটাই কথা বলবো, কোনো কিছু জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন। আর যদি জ্যোতিষ, বাস্তু, ফেংশুই, যন্ত্র, তন্ত্র সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চান, তাহলে আমাদের এই পেজটি তে লাইক দিন, আর আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ( DHAR ARTS ) টি সাবস্ক্রাইব করে পাশের নোটিফিকেশন বেল আইকন টি প্রেস করে দিন......।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভোজ্য পত্র কি ? আসল ও নকল ভোজ্য পত্র চিনবেন কিভাবে ?

বারো মুখী রুদ্রাক্ষের উপকারিতা ও ব্যবহার বিধি !