এক মুখী রুদ্রাক্ষের উপকারিতা ও ব্যবহার বিধি !


ek mukhi rudraksha

রুদ্রাক্ষ সম্পর্কে আমরা অনেকেই কম বা বেশী জানি। রুদ্রাক্ষ কথার অর্থ রুদ্রের অক্ষ! অর্থাৎ ভগবান শিবের চোখ। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে রুদ্রাক্ষ ভগবান শিবের অত্যন্ত প্রিয় বস্তুর মধ্যে একটি। আমরা যদি ঈশ্বরের বিশ্বাসী হই। যদি ভগবান শিবকে আরাধ্য বলে মনে করি, তাহলে রুদ্রাক্ষর গুরুত্ব কিন্তু আমরা কোনভাবেই অস্বীকার করতে পারি না। আসলে রুদ্রাক্ষ স্বয়ং ভগবান শিবের প্রতিরূপ! ভগবান শিব সকল দেবতার আরাধ্য। তাই রুদ্রাক্ষ যদি সঠিক বিধি অনুযায়ী ধারণ করা যায়, তাহলে অবশ্যই ভগবান শিবের সঙ্গে অন্যান্য দেবতারও আশির্বাদ লাভ হবে।  
Rudraksha 1-14 mukhi


মুল ভূখণ্ডে ১( এক থেকে একুশ) থেকে ২১ মুখী পর্যন্ত রুদ্রাক্ষ পাওয়া যায়। যার মধ্যে ১ থেকে ১২ মুখী পর্যন্ত রুদ্রাক্ষ সহজলভ্য। এবং ১৩ থেকে ২১ মুখী রুদ্রাক্ষ কিন্তু দুর্লভ এবং এর মূল্য হাতের নাগালের বাইরে। তবে ২ থেকে ৫ মুখী রুদ্রাক্ষ পর্যন্ত বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে সহজেই পাওয়া যায়,এর মুল্য খুবই সাধারণ। আপনি হয়তো ভাবছেন কত মুখী রুদ্রাক্ষ ধারণ করা আপনার জন্য শুভ হবে? এক্ষেত্রে আমি বলবো, আপনি যেকোনো রুদ্রাক্ষ ধারণ করতে পারেন, তবে প্রতিটি রুদ্রাক্ষের মধ্যেই বিশেষ ভিন্ন ভিন্ন গুন আছে, যা আমি প্রতিটা পর্বে অতি সংক্ষেপে আলোচনা করবো। তবে একটা কথা নিশ্চিত যে, রুদ্রাক্ষ কখনো অশুভ ফল দান করে না।

Rudraksha 1-ek mukhi

আজকে প্রথমেই আমি ১ মুখী রুদ্রাক্ষ নিয়ে আলোচনা করবো। প্রথমেই বলে রাখি একমুখী রুদ্রাক্ষ দুষ্প্রাপ্য নয়, বরং সহজলভ্য, কিন্তু মূল্যবান! অনেক পন্ডিত জ্যোতিষী ব্যক্তি আছেন যারা বলেন গোলাকার একমুখী রুদ্রাক্ষ হলো সর্বশ্রেষ্ঠ! আমার দীর্ঘ ২০ বছরের অভিজ্ঞতায় আমার চোখে আজও অবধি গোলাকার একমুখী রুদ্রাক্ষ চোখে পড়েনি! যা দেখেছি সে সব নকল তৈরি করা। তবে এর সঙ্গে এটাও বলে রাখি, আমি নিজের চর্ম চক্ষু তে গোল একমুখী রুদ্রাক্ষ দেখিনি ঠিকই, তার মানে এই নয় যে, গোলাকার একমুখী রুদ্রাক্ষ হয় না, হতে পারে, ঈশ্বরের সৃষ্ট এই পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কিছু নেই!

তবে আমি দীর্ঘ বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে যে তথ্যে উপনীত হয়েছি, তা হলো




একমুখী রুদ্রাক্ষ কেন গোল হয় না, জানতে হলে তার জন্য এই ( নিচের )  ভিডিওটি অবশ্যই দেখুন।   যাই হোক, একমুখী রুদ্রাক্ষ মূলতঃ অর্ধ চন্দ্রাকৃতি আকারের হয়ে থাকে। তবে কেনার সময় অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করবেন। নেওয়ার সময়ে অভিজ্ঞ কাউকে দেখিয়ে তবেই নেওয়া উচিত।  

বা বর্তমানে অনেক জেম টেস্টিং ল্যাবেও এখন রুদ্রাক্ষ টেস্ট করছে।



ধারণ করার সময় অবশ্যই কিছু বিধান আছে। যেকোনো সোমবার বা ভগবান শিবের আরাধনার দিন , শিব পূজার পরে ধারণ করতে হবে। পূজোর সময়ে দুধ মিশ্রিত গঙ্গাজল দ্বারা শোধন করে নিতে হবে। ধারণ করার সময় তিন বার ওঁ নমঃ শিবায় উচ্চারণ করে তবেই ধারণ উচিত।



যিনি একমুখী রুদ্রাক্ষ ধারণ করেন , তিনি সর্বদা ভগবান শিবের আশির্বাদ প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। তার কর্মে কোনো প্রকার বাধা বেশিক্ষণ টিকতে পারে না। তিনি নিজের কর্মে অবিচল থাকেন। সকল প্রকার পাপ নাশ হয়। ধারণকারী ব্যক্তির অশান্ত মন শান্ত হয়, এবং ধীরে ধীরে আধ্যাত্মিক চেতনার প্রকাশ প্রকাশ পায়। মুখমন্ডলে অদ্ভুত ত্বেজ প্রকাশ পায়, যা অন্যকে প্রভাবিত করে। 



আপনাকে যদি আপনার কর্মের প্রয়োজনে  সবসময় বাইরে যেতে হয় এবং বিভিন্ন জায়গায় খেতে ও ঘুমোতে হয়, তাহলে রুদ্রাক্ষ আপনার  জন্য খুবই ভালো একটি অবলম্বন। কারণ এটি আপনার নিজের শক্তিরই একটি গন্ডি তৈরি করে দেয়। আপনি একটু লক্ষ্য করে দেখবেন যে, যখন আপনি কোন নতুন জায়গায় ভ্রমণে যান, তখন কখনো কখনো আপনি খুব সহজেই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েন, আবার অনেক জায়গায় নানারকম ব্যস্ততার কারণে শারীরিকভাবে ক্লান্ত থাকলেও আপনি চাইলেও ঘুমোতে পারেন না। এর কারণ হল যদি আপনার চারপাশের পরিস্থিতি আপনার শক্তির অনুকূল না হয়, তবে এটি আপনাকে কখনোই স্থির হতে দেবে না। যেহেতু সাধু এবং সন্ন্যাসীরা নিরন্তর ভ্রমণ করে থাকেন, কোন স্থান ও পরিস্থিতি তাদের জন্য যেকোনো সময়ে অসুবিধে সৃষ্টি করতে পারে। তাই তারা একপ্রকার এটাকে নিয়মের মধ্যে ধরে নিয়েছে যে, একই জায়গায় তারা বেশিদিন নিজেদের কে স্থির রাখতে পারবেন না। আজকাল প্রায় বেশীরভাগ মানুষেরা তাদের ব্যবসায় বা পেশার কারণে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ, খাওয়া এবং ঘুমোতে শুরু করেছেন, কাজেই তাদের জন্য একটি রুদ্রাক্ষ সহায়ক বস্তু হতে পারে।  

tripundra-ek-mukhi-rudraksha


রুদ্রাক্ষের শোধন ও প্রাণ প্রতিষ্ঠা পুজোর বিধি: শোধন প্রক্রিয়া হওয়া উচিত যেকোনো সোমবার। অথবা ভগবান শিবের বিশেষ দিনে।




শোধন প্রক্রিয়া শুরু করার পূর্বে যা করতে হবে তাহলো, -  পূজা স্থলে ঈশান কোণে অর্থাৎ উত্তর-পূর্ব দিক অথবা পূর্ব দিকে মুখে করে বসতে হবে। প্রথমে ভালো করে রুদ্রাক্ষটিতে চন্দনের প্রলেপ লাগিয়ে দিতে হবে, তারপর একটি তামার পাত্রে বা পাথর বাটিতে দুধ মিশ্রিত গঙ্গাজলে রুদ্রাক্ষটিকে ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এই ভাবে পরিষ্কার করার রুদ্রাক্ষটি শিব ঠাকুরের ছবি বা মূর্তির সামনে একটি পরিষ্কার কাপড়ের ওপর রাখুন। কারণ এমনটা বিশ্বাস করা হয়ে থাকে যে, দেবাদিদেব মহাদেবের নয়ন অশ্রূ থেকেই নাকি রুদ্রাক্ষের জন্ম হয়েছিল। অর্থাৎ রুদ্রাক্ষ ভগবান শিবের প্রতিক বা অংশ বিশেষ। তাই রুদ্রাক্ষের পুজো করা উচিত সর্বদা হবে ভগবান শিবের সামনে এবং শিব জ্ঞানে। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে আরেকটা জিনিস মাথায় রাখা একান্ত প্রয়োজন। তা হল, রুদ্রাক্ষটি রাখতে হবে পরিষ্কার একটি কাপড়ের উপরে। তারপর জল, দই, দুধ, মধু এবং ঘিয়ের সাহায্যে শিব ঠাকুরের মূর্তি এবং রুদ্রাক্ষটি ভাল করে একসাথে স্নান করাতে হবে। এরপর ধুপ-ধূনো জ্বেলে পাঠ করতে হবে “ওম নম শিবায়” মন্ত্রটি। আর সব শেষে রুদ্রাক্ষের প্রকৃতি অনুসারে মন্ত্র জপ করে শেষ করতে হবে পুজো। 


এর মন্ত্রটি হলো -  ওম হ্রীং নম : মন্ত্র জপ করে এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করতে হবে।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভোজ্য পত্র কি ? আসল ও নকল ভোজ্য পত্র চিনবেন কিভাবে ?

বারো মুখী রুদ্রাক্ষের উপকারিতা ও ব্যবহার বিধি !

স্বপ্ন দোষ ? কালসর্প দোষ ? বশীকরণ বা কর্মে সাফল্য চান? তাহলে জানুন ময়ুর পালকের কিছু অসামান্য গুনাগুন!